পাবনা প্রতিনিধি : গরম চা ভর্তি ফ্লাক্স, সাথে একটি ব্যাগে ওয়ান টাইম চায়ের কাপ। সন্ধ্যায় ইফতারের পর পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে হাঁক দেয়া হয় ‘এই চা গরম’, ‘গরম চা’। গ্রামে বাড়িতে বসেই মিলছে দোকানের চায়ের স্বাদ। প্রতি কাপ চা পাঁচ টাকা। এভাবেই ফেরি করে চা বিক্রি করছেন মোশারফ হোসেন (৩১)। লকডাউনে তার চায়ের দোকান বন্ধ থাকায় সংসার খরচ চালাতে তিনি বেছে নিয়েছেন এই ব্যতিক্রমী আয়ের পথ।
মোশারফ হোসেনের বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মৃত আফাজ উদ্দিন। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে মেঝো সন্তান মোশারফ। বাহাদুরপুর ঈদগাহ মোড়ে রয়েছে তার একটি চায়ের দোকান। লকডাউনের শুরু থেকে সরকারের নির্দেশনা মানতে বন্ধ রাখতে হয়েছে দোকানটি। বসতবাড়ির জমিটুকু ছাড়া কিছুই নেই তার।
মঙ্গগলবার ২০ এপ্রিল রাতে বিডি২৪ভিউজের প্রতিনিধির সাথে কথা হয় মোশারফ হোসেনের। আলাপকালে তিনি বিডি২৪ভিউজ কে জানান, বাড়িতে তার স্ত্রী সন্তান সম্ভবা। চায়ের দোকান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩শ’ টাকা আয় দিয়েই সংসার খরচ চলতো। কিন্তু লকডাউন শুরু হলে তার দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছে। সেইসাথে বন্ধ হয়ে গেছে আয়ের একমাত্র পথ। প্রথম চারদিন বাড়িতে বসে সময় কাটে না। সংসার খরচ চলবে কিভাবে-এই ভেবে কোনো কুল কিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি। হঠাৎ করেই মাথায় বুদ্ধি আসে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে ডেকে ডেকে চা বিক্রি করার। সেই চিন্তা থেকেই বেছে নেন ব্যতিক্রমী এই আয়ের পথ।
মোশারফ জানান, বাড়ি থেকেই চা তৈরী করে বড় একটি ফ্লাক্সে ভরে নেন তিনি। সাথে নেন চা পান করার জন্য ওয়ান টাইম কাপ। সন্ধ্যায় ইফতার শেষে বেরিয়ে পড়েন গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায়। ডাক ছাড়েন এই চা গরম, গরম চা। ইফতার শেষে বাড়িতে সবাই যখন একটু আরাম করছেন, এক কাপ চায়ের জন্য মনটা আনচান করছে, লকডাউনে বাইরে দোকানপাট বন্ধ। এমন সময় মোশারফের চায়ের ডাক, গ্রামের পরিবেশে যুক্ত করেছে নতুন মাত্রা।
তার কাজে সহযোগিতা করে মোশারফের বন্ধু একই গ্রামের মৃত মালেক বাগমারের ছেলে চপল হোসেন। দুইজন মিলে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে ঘন্টা দুয়েক ঘুরে ঘুরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কাপ চা বিক্রি করেন। এতে অন্তত ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকা উপার্জন হয় মোশারফ হোসেনের। তা দিয়েই কোনোরকমে চলছে তার সংসার।
মোশারফ জানান, গত বছরের লকডাউন শুরুর পর গরীব মানুষদের অনেকে ত্রাণ দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তার কপালে কিছুই জোটেনি। এবারও লকডাউন শুরু হয়েছে। কেউ কিছু দিয়ে সহযোগিতা করেনি তাকে। কিন্তু খরচ তো আর বসে নেই। তাই বাধ্য হয়ে এইভাবে উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।
লকডাউনের আগে মোশারফের দোকানে নিয়মিত চা পান করতেন বাহাদুরপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেন, নজু হোসেন, আব্দুল আলীম সহ বেশ কয়েকজন। তারা জানান, যেহেতু লকডাউন। বাইরে যাওয়া যাচ্ছে না। দোকানও বন্ধ। এখন দেখি মোশারফ চা নিয়ে বাড়িতে হাজির। প্রথমে অবাক হলেও পরে ভাল লাগছে বিষয়টা। এখন বাড়িতে বসেই চা পান করতে পারছি।
দুই নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু বক্কার সিদ্দিক জানান, মোশারফ হোসেন ভাল ছেলে। লকডাউনে দোকান বন্ধ থাকায় গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে চা বিক্রি করছে। পেটের তাগিদে বাধ্য হয়ে একাজ করছে সে। এবার করোনাকালীন সরকারি বরাদ্দ আসার পর তাকে সহযোগিতা করা হবে।