তৌহিদ উদ দৌলা রেজা মেহেরপুর থেকে : বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্যের ওপর শতাংশ হারে বা অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতিতে যে করারোপ করা হয় তা অত্যন্ত ত্রুটিযুক্ত এবং যথাযথভাবে কার্যকর নয়। ফলে সরকার কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তামাক কোম্পানির মুনাফা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। একইসঙ্গে এ পদ্ধতির কারণে তামাকজাত দ্রব্য সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্বে তামাক নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলোর মত জরুরিভিত্তিতে ‘অ্যাড ভেলোরেম’ করারোপ পদ্ধতির পরিবর্তে ‘সুনির্দিষ্ট করারোপ’ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে।
বুধবার (২১ এপ্রিল ২০২১) সকাল ১১টায় অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) এর যৌথভাবে আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে বক্তারা এ দাবি জানান। “তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ কেন জরুরি” শীর্ষক এ ওয়েবিনারটি মিটিং সফটওয়ার জুম এর মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মকর্তা, তামাক নিয়ন্ত্রণ অ্যাডভোকেট ও উন্নয়ন কর্মীরা এ ওয়েবিনারে অংশ নেন।
সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি সর্ম্পকে ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারেই তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা যায়। ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২’ এর ধারা ১৫(৩) ও ৫৮ তে এ বিষয়ে উল্লেখ করা আছে। সুনির্দিষ্ট কোরোপ পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে করের পরিমাণ নির্ণয় ও কর আদায় করা সহজ হবে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি সব ধরণের তামাকজাত পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পাবে। ফলে তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ কমবে। ওয়েবিনারে তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির হার মূল্য স্ফিতির সাথে সামঞ্চস্যপূর্ণ না হওয়ায় এটি মানুষের কাছে আরও সহজভ্য হয়ে পড়ছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত ১০ বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তুলনায় তামাকজাত দ্রব্যের দাম কম হারে বেড়েছে। এসময় তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার কথা স্মরণ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সময়ের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ পেতে হলে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে হবে। এর জন্য সবচাইতে সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদ্ধতি হলো তামাকজাত দ্রব্যের ওপর অধিক হারে কর বৃদ্ধি এবং সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতির প্রচলন করা।
ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধাপক এবং বিএনটিটিপি এর টেকনিক্যাল কমিটির কনভেনর ড. রুমানা হক ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের কর প্রস্তাব তুলে ধরেন। ওয়েবিনারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে প্যানেল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্য (সিরাজগঞ্জ-২) অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের পরিচালক-গবেষণা (উপসচিব) ড. মো. নুরুল আমিন এবং দ্য বাংলাদেশ পোস্ট এর বিশেষ প্রতিনিধি নূরুল ইসলাম হাসিব। এছাড়া দেশের তামাক বিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।