পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহরের সেই বাক প্রতিবন্ধী মিতু রানী দাসের কথা সবার মনে আছে নিশ্চয়ই। যে মুখে কথা বলতে না পারলেও, তার আঁকানো একেকটি ছবি কথা বলতো। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও, যেকোনো ছবি দেখে হুবুহু এঁকে দিতে পারে। সেই বাক প্রতিবন্ধী মিতু এখন নিজে নিজেই চেষ্টা করছে কথা বলার। দু’একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারছে সে। সহপাঠি বন্ধুদের সাথে থাকতে থাকতে ও মনের ভাব আদান প্রদান করতে গিয়ে এই চেষ্টা করছে মিতু। তা দেখে উচ্ছসিত বাবা-মা, সহপাঠি বন্ধু, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সবার আশা মিতু একদিন পুরোপুরি কথা বলতে পারবে।
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করেছিলেন চাটমোহরের গণমাধ্যমকর্মীরা। তারপর সেই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিলেন তৎকালীন ইউএনও সরকার অসীম কুমার। তার অংকন শিক্ষা ও পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে মিতু অংকন শিক্ষক মানিক দাসের তত্ত্বাবধায়নে চিত্রাঙ্কন শেখা শুরু করে। চিত্রগৃহ চাটমোহরে ভর্তির পর আজ সেই মিতু অনেকটাই পরিণত। সে এখন ছবি আঁকার পাশাপাশি মাটি দিয়ে প্রতিমাও তৈরী করতে পারে।
তার সেই দক্ষতার খবর জানতে পেরে মঙ্গলবার (১১ মে) দুপুরে চাটমোহরের হরিপুর ইউনিয়নের ধুলাউড়ি ঘোষপাড়া গ্রামে মিতুদের বাড়িতে যান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার। তিনি মিতুর আঁকানো ছবি ও তার শিল্পকর্মগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান হামিদ মাস্টার মিতুর হাতে ক্যানভাস, রং, তুলি, খাতা, প্যালেটসহ ছবি আঁকার সরঞ্জাম তুলে দেন। সেইসাথে মিতুর বাবা কুটিশ্বর চন্দ্র ও মা সুমিত্রা রানী দাসের হাতে ঈদ খাদ্যসামগ্রী উপহার তুলে দেন।
এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যানকে বাঁশের তৈরী কুলা উপহার দেন মিতুর বাবা। উপজেলা চেয়ারম্যান মিতুকে জিজ্ঞেস করেন তুমি কুলা বানাতে পারো? মিতু তখন আধো আধো ভাষায় উচ্চারণ করে ‘অল্প অল্প’। তার এই শব্দ উচ্চারণ শুনে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে যান। তখন উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, একটু ভাল চিকিৎসা দিলে মিতু সম্পূর্ন কথা বলতে পারবে। আমি তাকে চিকিৎসা করাবো। করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলে তিনি তার স্ত্রী-সন্তানের সাথে মিতুকেও ভারতে নিয়ে নিজ অর্থায়নে চিকিৎসা করানোর আশ্বাস দেন।
এ সময় চিত্রশিল্পী মিলন রব, চিত্রগৃহ চাটমোহরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমান আসাদ, শিল্প পরিচালক মানিক দাস, রাজশাহী জুট মিলের পাট বিভাগীয় প্রধান মোঃ জিয়াউর রহমান, সাংবাদিক শাহীন রহমানসহ চিত্রগৃহ চাটমোহরের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। অংকন শিক্ষক মানিক দাস বলেন, মিতু এখন অনেক কথা আধো আধো ভাষায় শব্দ উচ্চারণ করতে পারে। আগে কিছুই বলতে পারতো না। এটা দেখে আমাদের অনেক ভাল লাগছে। আশা করি সে চিকিৎসা পেলে আরো ভালভাবে কথা বলতে পারবে। এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মাস্টার ফৈলজানা ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে ও উপজেলা চেয়ারম্যানে বাসভবন চত্বরে অর্ধ শতাধিক অসহায় দুস্থ মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী ও মাস্ক বিতরণ করেন। এছাড়া নির্মাণাধীন চাটমোহর ডায়াবেটিক হাসপাতালের অগ্রগতি পরিদর্শণ করেন।