রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতার একটি অনন্য নাম রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজ। এই কলেজ বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার গণমানুষের দীর্ঘ দিনের চাহিদার একটি প্রতিষ্ঠান যা বর্তমানে অত্র এলাকায় মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই মূলত রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসনের এই মহতি উদ্যোগ।
রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজ ২০১৪ সালের ১১ মে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: মোস্তফা কামালের উদ্যোগে আসামবস্তি এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গের সহযোগীতায় একটি বেসরকারী কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজটি জেলা শহরের পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের আসামবস্তীর নরিকেল বাগানের ৩.০০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত যার উত্তর দক্ষিণে কাপ্তাই লেক এবং রয়েছে মনোরম পরিবেশ। রাঙ্গামাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাংশে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি জেলা যা শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া একটি পাহাড়ী অঞ্চল। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চল তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতাহেতু এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষাক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন দিক থেকে অনুন্নত জীবনধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া অত্র জেলা শহরে দুইটি কলেজ সরকারী কলেজ থাকলেও আসন সংখ্যার অপ্রতুলতায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে যাচ্ছে এবং ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা শহরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বিধায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসন ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সময়কালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করে। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো: মোস্তফা কামালের আহবানে সাড়া দিয়ে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য এমপি সহ জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সার্কিট হাউজে মিলিত হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে শুরু হয় কলেজ প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম ।
কলেজটির জায়গা নির্ধারিত হয় জেলা শহরের আসামবস্তির নারিকেল বাগানে এবং ২০১৪ সালের ১১ মে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈচিং, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এমপি দীপংকর তালুকদার, মহিলা সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা (এনডিসি), রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা , রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার আমেনা বেগম প্রমুখসহ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার শিক্ষানুরাগী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে কলেজটির শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৩.০০ একর ভূমি রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজের নামে বন্দোবস্ত দিলে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড একাডেমিক ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা (এনডিসি) ২০১৪ সালের ২১ নভেম্বর একাডেমিক ভবন নির্মাণের শুভ উদ্বোধন করেন। ফলে এগিয়ে যায় কলেজটির ভূমি ও ভবন নির্মাণ কার্যক্রম । তাছাড়া শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম ২০১৪ সালের ২৫ জুন এর মধ্যে সম্পন্ন হলে ২০১৪ সালে ৯ আগস্ট থেকে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে মোট ২৭৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রমের শুভ সূচনা হয় অস্থায়ী ক্যাম্পাস রাঙ্গামাটি শহরের তবলছড়িস্থ জেলা প্রশাসন কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত মিনিস্ট্রিয়াল ক্লাবে। তবে একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত হওয়ায় বর্তমানে অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কলেজের অধ্যক্ষ তাছাদ্দিক হোসেন কবীর। তিনি কলেজটিকে মাদকমুক্ত ও রাজনীতিমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন এবং প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর সার্বিক তদারকির জন্য একজন শিক্ষককে মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন। তাঁর কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকমন্ডলী কাজ করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।এছাড়াও নির্বাহী কমিটি ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন। এভাবে ২০১৪ সালে ২২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ২০১৪ সালে ৩০ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড চট্টগ্রাম কর্তৃক পাঠদানের অনুমোদন পেলে কলেজটির পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে কলেজটি এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দিক থেকে সহযোগীতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। শুরুতে জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ১ টি কম্পউটার, ২ টি লেপটপ, ১ টি প্রিন্টার ও মাল্টিমিডিয়া হস্তান্তর কলেজের অগ্রগতিতে আরেকটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শিক্ষক ও কর্মচারী বেতন বাবদ জেলা প্রশাসন মাসিক ৫০,০০০/- টাকা এবং রাঙ্গামাটি কাঠব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লি: মাসিক ৫০,০০০/- টাকা প্রদান করে কলেজের অগ্রগতিকে আরো বেগবান করেছে। কিন্ত হঠাৎ জেলা প্রশাসক মো: মোস্তফা কামালের বদলির সংবাদটি শিক্ষকমন্ডলী তথা গোটা কলেজ পরিবারকে ব্যাথিত করে । কেননা কলেজটি সবই মাত্র জন্ম হয়েছে, আর সবকিছু গুছিয়ে উঠার আগেই এমন দুসংবাদ কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে মো: সামসুল আরেফিন দায়িত্ব গ্রহণ করলে কলেজটি পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। ফিরে আসে প্রাণোজ্জল পরিবেশ। তাঁর সময়কালে জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে আরো ২ টি কম্পউটার, মাল্টিমিটডয়া, কালার প্রিন্টার, স্ক্যানার, ফটোকপিয়ার হস্তান্তর এবং শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হলে আরেক ধাপ এগিয়ে যায় কলেজটি। আর ২০১৬ সালের এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় ৬৪.৬৬% পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলে সফলতার মুখ দেখতে পায় কলেজটি। তবে বর্তমান সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল ২০১৬ সালের ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজকে ছাত্র-ছাত্রীর যাতায়াতের জন্য একটি বাস দেওয়া হয়। এরপর কলেজটি একটু গুছিয়ে নিচ্ছে ঠিক তখনই আবার ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেজে উঠল জেলা প্রশাসক মোঃ সামসুল আরেফিন এর বিদায়ী ঘন্টা। আবারো মেনে নিতে হলো জেলা প্রশাসক মো: সামসুল আরেফিন এর বিদায়। কিন্তু নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান দায়িত্ব গ্রহণে পুনরায় অভিভাবক ফিরে পায় কলেজটি। চলে আসে স্বস্তি সবার মনে। দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি কলেজের সার্বিক বিষয়ের খোজ খবর নিয়ে কলেজটিকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে যাচ্ছেন যা কলেজের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল সুদীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় অত্র অঞ্চলে গড়ে উঠেনি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা । কিন্তু অত্র অঞ্চলের শিক্ষর্থীদের আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা ফুরিয়ে যায়নি। তাই তারা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার স্বপ্নকে লালন পালন করেছে স্মরণাতীতকাল থেকে। আর এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সর্বাত্মক সহযোগীতা । বাংলাদেশের উন্নয়নের জোয়ারের সাথে তাল মিলিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে সামগ্রিক দিক থেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বর্তমান সরকার যে কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং বাস্তবতা নির্ভর। তারই ধারাবহিকতায় রাঙ্গামাটি পাবলিক কলেজের অগ্রযাত্রায় সবার সহযোগীতা একান্ত কাম্য। আর তবেই সম্ভব শিক্ষার আলোয় আলোকিত ও সুখী সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা।