পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার ভাঙ্গুড়ায় বসতঘর থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি বড় গোখরা সহ শতাধিক গোখরা সাপের বাচ্চা উদ্ধার করে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে এলাকাবাসী।
গোখরা সাপের এই প্রজন্ম সময়ে এমন ঘটনায় প্রাণীসম্পদ ও পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করা সংগঠনগুলো বলছে, ভয় পেয়ে এসব সাপ না মেরে সাপ ধরে বনবিভাগকে খবর দিলে বা হস্তান্তর করলে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে। প্রয়োজনে জনসচেতনামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
আজ শুক্রবার দুপুরে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের রাঙ্গালিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের বাড়ি থেকে এসব সাপ উদ্ধার করা হয়। এসময় আরো অর্ধশতাধিক সাপের ডিম পাওয়া যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা বড় গোখরা সহ শতাধিক সাপের বাচ্চাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার দুপুরে আব্দুল মান্নান তার শোবার ঘওে মেঝেতে একটি গর্ত দেখতে পান। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই গর্তের আশেপাশে কয়েকটি গোখরা সাপের বাচ্চাকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। তখন তিনি বাড়ির অন্যান্য সদস্য ও প্রতিবেশীদের সাহায্যের জন্য ডাকেন। প্রতিবেশীরা লাঠিসোটা ও কোদাল নিয়ে এসে ঘরের মেঝের ওই গর্ত খনন শুরু করে। এ সময় ওই গর্ত থেকে শতাধিক গোখরা সাপের বাচ্চা ও অর্ধশতাধিক ডিম সহ দুটি বড় গোখরা সাপ বের হলে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। পরে এসব সাপ ও ডিম নষ্ট করে বাড়ির পাশে গর্ত করে পুঁতে ফেলা হয়। এরপর এলাকাবাসী আশেপাশের এলাকায়ও সাপ আছে কিনা অনুসন্ধান চালায়।
রাঙ্গালিয়া গ্রামের ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আব্দুল মান্নানের বাড়ির পরিবারের সদস্যদেও সৌভাগ্য যে কাউকে সাপ দংশন করেনি। গোখরা সাপের বাচ্চাগুলো বড় হলে ওই বাড়ির মানুষ সহ এলাকার মানুষের জন্য কত বড় বিপদজনক হতো। যাই হোক প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় সাপগুলো মারা সম্ভব হয়েছে। এখন কিছুটা হলেও এলাকাবাসী বিপদমুক্ত।
পাবনার প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক সংগঠন নেচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনসারভেশন কমিউনিটি (এনডাব্লিউসিসি) সভাপতি এহসান বিশ্বাস লিটু বলেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ গোখরা। ইংরাজী নাম ইন্ডিয়ান কোব্রা। অন্য নাম স্পেক্টাকল্ড কোব্রা। বৈজ্ঞানিক নাম- নাজা নাজা । অন্য নাম খড়মপায়া বা খইয়া গোখরা। বিষধর এলাপিডি পরিবারের মধ্যে কোবরা একটি বড় সর্পগোষ্ঠি, সাধারণত: নাজা গণের, যার মধ্যে পড়ে গোখরা, শঙ্খচূড়া, স্পিটিং কোবরা ইত্যাদি সাপ, যাদের ফণা আছে। নাজা কাউথিয়া বা পদ্ম গোখরা এদের নিকটতম আত্মীয়। গোখরোর ফণার পিছনে গরুর ক্ষুর বা পুরোনো দিনের ডাঁটি ছাড়া জোড়া-চোখো চশমার মত মত দাগ থাকে তার থেকে নাম গোক্ষুর বা গোখরো। কেউটের ফণার পিছনে গোল দাগ থাকে তাই গোখরোর দুচোখার পরিবর্তে খারএকচোখা চশমা বা মনোকল-এর উপমা দিয়ে কেউটের ইংরাজী নাম মনোকল্ড কোবরা। এরা বছরের এই সময় সাধারণত বংশবৃদ্ধি করে, বিষধর এই গোখরা সাপ।
এ বিষয়ে এনডাব্লিউসিসি সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফারুক আহম্মেদ বিডি২৪ভিউজডট.কম কে বলেন, গোখরা স্তুপ জায়গায়, পুরাতন বাড়ি, তার আশেপাশে বসবাস করতে পছন্দ করে। পোকা মাকড় ইঁদুর ব্যাংঙ প্রধান খাদ্য। আমাদের পরিবেশে এদের ভুমিকা অনেক, তাই এদের সংরক্ষণ করা উচিত। সাপ দেখলে মানুষ ভয় পেয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে, আসলে মেরে ফেলাই যদি সমাধান হত তাহলে পৃথীবিতে সাপের জন্ম হতো না। প্রয়োজনে সাপ ধরে বনবিভাগকে খবর দিলে বা বনবিভাগে হস্তান্তর করলে আমাদের পরিবেশ রক্ষা পাবে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বিডি২৪ভিউজডট.কম কে জানান, মানুষ সাপ দেখলেই আতংকে তাদের মেরে ফেলে। এখন সাপের প্রজন্মের সময়, এসব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জনসেচতনামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এতে জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে।