মোঃ মোশাররফ হোসেন, (মদন) : নেত্রকোণার মদনে বয়স জালিয়াতি করে বয়স্ক ভাতার তালিকাভুক্ত হওয়া ৭৯৩ সুবিধাভোগীর ভাতা বাতিল করে শনাক্ত করেছেন উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। বয়স যাছাইয়ের জন্য সফটওয়্যার চালু করায় এসব প্রতারণা ধরা পরে। ফলে তাঁদের ভাতা বাতিল করে প্রকৃত বয়স্কদের ভাতার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। তবে নির্দেশনা না থাকায় আইনগত বা অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী ভাতাভোগী হতে হলে পুরুষ সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ৬৫ এবং নারীদের ৬২ বছর। বয়স প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে নেওয়া হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভাতাভোগীদের নির্বাচিত করা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থেকেই ৭৯৩ জন তাঁদের বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত করে ছিলেন বলেন এলাকার সচেতন মহলের ধারণা। তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখে ঘষামাজা অথবা ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে বয়স বাড়িয়ে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। তবে জন্মসনদের বিধান সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা গ্রহণ করে আসছেন।
এদিকে সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যাচাইবাছাই করা শুরু করা হলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রায় দুই মাস ধরে চলা এই যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে উপজেলার পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নে মাট ৫ হাজার ৮৯৪ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ৭৯৩ জনের বয়স জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছে। এই ৭৫০ ব্যক্তি নিজেদের বয়স ৭-১০ বছর বাড়িয়ে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন। এসব ভাতাভোগীদের নাম বাতিল করে নতুনদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বয়স্ক ও ভাতাবঞ্চিত ব্যক্তিদের নাম অর্ন্তভুক্ত করে ইউনিয়ন কমিটি থেকে উপজেলা কমিটিতে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়ের কাইটাইল ইউনিয়নে ৮০ জন, চানগাঁও ইউনিয়নে ৫১ জন, মদন ইউনিয়নে ৭০জন, গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নে ৭০জন, মাঘান ইউনিয়নে ১৩০ জন, তিয়শ্রী ইউনিয়নে ৯০ জন, নায়েকপুর ইউনিয়নে ১১০ জন ও ফতেপুর ইউনিয়নে ১১০ বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত হয়ে ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট জন প্রতিনিধের মাধ্যমে তাঁরা জালিয়াতি করে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।
তালিকাভুক্ত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এই ভাতা চালু হয়। প্রথম দিকে বয়স প্রমানের জন্য কোনো প্রমাণ পত্র প্রয়োজন না হলেও পরে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে অনিয়ম বেশি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাতিল হওয়া কয়েক ব্যক্তি বলেন, তাঁরা ভাতা পাওয়ার উপযোগী হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁদের বয়স কম দেখানো হয়েছে। ওই সময়ে যাঁরা ভোটার তালিকা করেছেন, তাঁরাই বয়স বসিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে তাঁরা জন্মসনদে সঠিক বয়স দিয়ে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তবে জাতীয়পত্রে বয়স কম থাকার কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন বলে শুনেছেন তাঁরা। বয়স জালিয়াতি করে ভাতার তালিকাভুক্ত হওয়া এক নারীসহ ৫ ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, স্থানীয় জন প্রতিনিধিরা আমাদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে তাঁদের ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তারা তাঁরা কিছুই জানেন না।
তিয়শ্রী ইউপি চেয়ারম্যান ফকর উদ্দিন আহমেদ বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ৯০ জন বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। এসব ভাতাভোগী বিগত চেয়ারম্যান মেম্বারদেও মাধ্যমে হয়েছিল। ভোটার তালিকার সাথে তাদেও বয়সের কোন মিল নেই। ফলে সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাইয়ে তাদেও ভাতা বাতিল করা হয়েছে। উপজেলা কমিটির নির্দেশ ক্রমে নতুন ভাতাভোগীদের তালিকা প্রেরণ করা হবে।
ভাতা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ্ জামান আহমেদ বলেন, মদন উপজেলায় পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নে সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাইয়ে ৭৯১ জনের বয়স কমের বিষয়টি ধরা পড়ে। তাঁদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা বা টাকা ফেরতের নির্দেশনা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন,জালিয়াতির মাধ্যমে যাদের ভাতা বাতিল হয়েছে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাতা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান জানান, কম্পিউটারের মাধ্যমে যারা নকল আইডি তৈরি করেছিল তাদের ভাতা বাতিল করা হয়েছে সত্যতা স্বীকার করে বলেন,বাতিল হওয়া বয়স্ক ভাতাভোগীদের পরিবর্ততে যাদের বয়স হয়েছে এবং দীর্ঘদিন যাবত ভাতা থেকে বঞ্চিত তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে। অচিরেই এর পদক্ষেপ নেয়া হবে।