শিবরামপুর মহল্লার আফজাল হোসেনের স্ত্রী লাকী খাতুন জানান, স্বামীর একার আয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই আমি যদি একটু পরিশ্রম করে যদি কিছুটা আয় হয় তাহলে সংসারটা আরেকটু ভালভাবে চলবি। তাই মাহবুব ভাইয়ের কাছে বলার পর গত রোযার মধ্যে তিনি একটি সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছেন। তা দিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি।
সদর উপজেলার বলরামপুর গ্রামের মৃত এস কে আহম্মেদের ছেলে ফারুক আহম্মেদ জানান, তিনি ভ্যানে করে সবজি নিয়ে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সম্প্রতি ভ্যানটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে মাহবুব ভাই একটি ভ্যান কিনে দিয়েছেন। সেটা দিয়ে এখন আমি আবার আয় রোজগার শুরু করছি।
এছাড়া শহরের জোড়বাংলা পাড়া এলাকার মহিদুল ইসলামের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন ও কালাচাঁদপাড়া মহল্লার কামাল হোসেনের স্ত্রী সুমী খাতুনকে এক জোড়া করে ছাগল দেয়া হয়েছে। যাতে তারা এর মাধ্যমে টানাটানির সংসারে একটু বাড়তি আয় করতে পারেন।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক দেওয়ান মাহবুব জানান, আমার বন্ধু-বান্ধব, সমাজের বিত্তবান ও দয়ালু মানুষের আর্থিক সহায়তায় আমরা ইতিমধ্যে দুইজনকে দুই জোড়া ছাগল দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে দুইজন নারীকে কাপড় কিনে দিয়েছি। বিভিন্ন মসজিদ, গোরস্তান ও হাট-বাজারে ১০টি টিউবওয়েল স্থাপন করিয়ে দিয়েছি। সেলাই মেশিন দিয়েছি দুইজন নারীকে। একজন মানুষকে মাছ চাষের উদ্বুদ্ধ করতে তাদের বাড়ির পাশে পুকুর সংস্কার করে সেখানে পোনা মাছ দিয়েছি। মাছ চাষের খরচও আমরা দিব। দুইজনকে ভ্যান কিনে দিয়েছি। দুই হাজার পরিবারকে একটি করে গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া তিনজন ব্যক্তির মরদেহ দাফন করেছি আমরা। এর আগে করোনা মহামারীর শুরুতে ১৮শ’ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। একশ’ পরিবারকে সবজি, একশ’ পরিবারকে ডিম ও ৫শ’ কিশোরীর মাঝে সেনেটারী ন্যাপকিন বিতরণ করা হয়েছে।
মাহবুব আরও জানান, আমরা আরেকটি উদ্যোগ নিয়েছি সেটি হলো, করোনা পরিস্থিতির কারণে আসন্ন ঈদুল আযহায় অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ কোরবানী দিতে পারবেন না। তারা কারো কাছে কোরবানীর মাংস চাইতেও পারবেনা। তাই আমরা সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছি সাত হাজার টাকার একভাগ অথবা ৫০ হাজার টাকা মুল্যে একটি গরু কোরবানী দেয়ার অর্থ আমাদের দিতে। আমরা তাদের নামে কোরবানী করে সেই মাংস মধ্যবিত্ত মানুষদের বাড়িতে গিয়ে গোপনীয়তার সাথে দিয়ে আসবো।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে দেওয়ান মাহবুব জানান, প্রথম অবস্থায় সদর উপজেলার এক হাজার মানুষকে আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেবো। এটা সফলভাবে শেষ হলে পর্যায়ক্রমে জেলার বাকি আটটি উপজেলাতেই একইভাবে আরো আট হাজার মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এতে করে বাংলাদেশে আত্মকর্মসংস্থানে একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পাবে পাবনা জেলা। সেইসাথে পাল্টে যাবে জেলার অর্থনৈতিক চালচিত্র।
সংগঠনের জনসংযোগ পরিচালক ও স্বেচ্ছাসেবী শিশির ইসলাম বলেন, মানুষের জন্য কাজ করে এক অন্যরকম মানসিক শান্তি অনুভব করি। একারণে ছুটে চলা। বর্তমানে আমরা কোনোরকমের সরকারি বেসরকারি সহায়তা পাইনা। যদি সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে এই বহুমুখী কার্যক্রমকে আরো ভালভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তিনি সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহবান জানান।