পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলীকে অপহরণ ও হত্যাকান্ডের মামলার রহস্য উদঘাটন ও মূল পরিকল্পনাকারী, হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে পাবনা পিবিআই। মঙ্গলবার দুপুরে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে।
মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত একই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) ও তার স্ত্রী মোছাঃ যুথী আক্তার ওরফে আদুরী (২৮) কে পলাতক অবস্থায় ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন উত্তর গাজীর চট এলাকা থেকে মঙ্গলবার ভোর রাতে গ্রেফতার করে। এর আগে গত (১৩ এপ্রিল) ইব্রাহিম প্রামানিক (৩০) নামে আরেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পিবিআই।
পিবিআই জানায়, গত ৩১ মার্চ সন্ধ্যা সাত টার দিকে শালগাড়িয়া শাপলা প্লাস্টিক এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে জেলা যুবদলের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী (৪০) নিখোঁজ হয়। এ বিষয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন গত ১ এপ্রিল পাবনা সদর থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে।
এরপর গত (৫ এপ্রিল) দুপুরে বস্তাবন্দি একটি লাশ আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মোঃ কাসেম, পিতা-কানু মন্ডল এর বসতবাড়ীর টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতর হতে উদ্ধার করে পুলিশ। সংবাদ পেয়ে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন উক্ত লাশ শাহজাহানের বলে দাবী করে। এ বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিকটিমের ভাই মোঃ আব্দুল গফুর এজাহার দায়ের করে। মামলাটি প্রথমে পাবনা সদর থানা পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কিন্তু কুল কিনারা না পাওয়ায় পিবিআই হেডকোয়ার্টারের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই পাবনাকে দায়িত্ব দেয়।
পিবিআই ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাধায়ন ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, পাবনা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী এর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সবুজ আলী মামলাটি তদন্ত করেন।
এ বিষয়ে পিবিআই পাবনা প্রধান পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ সবুজ আলী বলেন, এটি একটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। পরকিয়ার জের ধরে মামলার ভিকটিম শাহজাহান আলীর সাথে মোছাঃ যুথী আক্তার ওরফে আদুরী (২৮) এর সম্পর্কের টানাপোড়ন চলতে থাকে। বিজ্ঞ আদালতে প্রেরিত আসামী মোছাঃ যুথী আক্তার আদুরী তার পরিবারসহ যে বাসায় ভাড়া থাকত তার মালিক চট্টগ্রামে বসবাস করে। উক্ত বাসার ভাড়া উঠানোর দায়িত্ব ছিল ভিকটিম শাহাজাহানের উপর। তাদের বাসাও ছিল পাশাপাশি স্থানে। তারা মোবাইল ফোনে মাঝেমধ্যে কথা বলতে বলত এক পর্যায়ে পরকিয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। শাহজাহান ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ছিল। ভিকটিম শাহজাহান যুথীকে স্ত্রীর মত ব্যবহার করতে চাইতো। কিন্তু যুথী এক পর্যায়ে শাহাজাহানের প্রতি প্রচন্ড বিরক্ত ও অতিষ্ট হয়ে সকল ঘটনা তার পরিবারকে খুলে বলে। তখন যুথীর স্বামী ও নিজস্ব লোকজন শাহজাহানকে হত্যার পরিকল্পনা করে এবং যুথীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম শাহজাহানকে হত্যার জন্য ঘুমের ঔষধ কিনে যুথীকে দেয়। যুথীর ভিকটিম শাহজাহানকে হত্যার উদ্দেশ্য শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রলোভন দেখিয়ে ঘটনার দিন গত (৩১ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পূর্ব নীল নকশা অনুযায়ী অন্যান্য আসামীদের সাথে পরষ্পর যোগসাজস করে সু-কৌশলে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর গ্রামস্থ তাদের এক নিকট আত্মীয়ের বাড়ীতে হত্যার উদ্দেশ্য অপহরণ করে নিয়ে যায়।
উক্ত বাড়ীতে যুথী, জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য আসামীগণ পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক খাবারের মধ্যে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ভিকটিম শাহজাহানকে খাওয়ায়। ঘুমের ঔষধ মিশ্রিত খাবার খেয়ে ভিকটিম শাহজাহান আলী ঘুমিয়ে পড়লে যুথী তার স্বামী জাহাঙ্গীর এবং অন্যান্য আসামীগণ ভিকটিম শাহজাহানকে অচেতন অবস্থায় হাত-পা বেধে গলায রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। একপর্যায়ে তারা উক্ত লাশ গুম করার উদ্দেশ্য বস্তাবন্দি করে আটঘরিয়া থানাধীন গঙ্গারামপুর হাফিজিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মোঃ কাসেম, পিতা-কানু মন্ডল এর বসতবাড়ীর টয়লেটের সেফটি ট্যাংকের ভিতরে ফেলে দিয়ে খড়-কুটা দিয়ে ঢেকে রাখে। পরবর্তিতে যুথী ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর ঢাকা পালিয়ে যায় বলে জানান।
উল্লেখ্য যে, অত্র মামলার ঘটনায় ইতিপূর্বে গত (১৩ এপ্রিল) আসামী মোঃ ইব্রাহীম প্রামানিককে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হলে সেও নিজেকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
পিবিআই পাবনা প্রধান পুলিশ সুপার মোঃ ফজলে এলাহী বলেন, গ্রেফাতারকৃত আসামীদ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামী যুথী আক্তার ওরফে আদুরী ও তার স্বামী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম শাহাজাহানকে সু-কৌশলে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুম করার ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে এবং অন্যান্য আসামীদের নাম প্রকাশ করেছে।