তৌহিদ উদ দৌলা রেজা : “আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি-জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি” স্লোগানে ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে “তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা ও করণীয়” বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) সকাল ১১ টায় অনলাইন প্লাটফর্ম জুমে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা, ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়কে কার্যকর করার ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানি হতে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার অপরিহার্য দাবী করেন বক্তারা।
বাংলাদেশ জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতির সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ। দি ইউনিয়ন এর সহযোগিতায় এইড ফাউন্ডেশন, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট(বাটা) আয়োজিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এইড ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী তারিকুল ইসলাম পলাশ। এইডের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানার সঞ্চালনায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, ফেনি-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরীন আক্তার, আইআরডি ওয়ার্ল্ড ডিরেক্টর ড. হামিদাহ হুসাইন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ধামরাই পৌর মেয়র গোলাম কবির, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ লেলিন চৌধুরী ইউএনবি এর এ্যাট লার্জ এডিটর ড. আফসান চৌধুরী, এইড ফাউন্ডেশনের সভাপতি জেএম ইসরাইল হোসেন শান্তি ।
বক্তারা বলেন, সরকার নিজেই ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর ৯.৪৯% অংশীদার হয়ে তামাক ব্যবসা ও ব্যবহার প্রসারে কার্যকর ভূমিকা রাখছে। যেহেতু সরকার তামাক ব্যবসা-বিপননের অংশীদার তাই তামাক নিয়ন্ত্রণে সে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। সরকার নিজেই তামাক কোম্পানীর অংশীদার হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার নির্মূলে তাঁর ঘোষণা বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বিষয়টি গুরুতর কনফ্লিকট অব ইন্টারেষ্ট তৈরী করেছ। জনস্বাস্থ্যের প্রতি ক্ষতি সৃষ্টিকারী তামাকের ব্যবসার অংশীদার হয়ে সরকার সংবিধানে উল্লেখিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির (ধারা ১৮-১) সাথে দ্বৈত আচরণ করছে। ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর অন্যতম মালিক হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তার নিজের জনগনের স্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিকারী বিষের ব্যবসার অংশীদারীত্ব ছেড়ে দিতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, সরকারী বা সামাজিক বিনিয়োগে নির্মিত রাস্তা বা জনপথকে পাবলিক প্লেসের সংজ্ঞার মধ্যে আনতে হবে। বাসগৃহের অভ্যন্তরে ধুমপান ও তামাকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। একজন নাগরিক যাতে অন্য কোন নাগরিকের জান-মালের বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি করতে না তার তার সুরক্ষার জন্য একাধিক আইন রয়েছে। ধারা-৪-টির শিরোনাম হতে হবে, ‘‘পাবলিক প্লেস, পাবলিক পরিবহণ ও বাসগৃহে ধূমপান নিষিদ্ধ”।
অংশগ্রহনকারীরা বলেন, দোকানদারদের ব্যপক অসচেতনতা পুঁজি করে এবং ছোট-খাট দোকানদারদের মাথায় জরিমানার ঝুঁকির বোঝা মাথায় দিয়ে তামাক কোম্পানী প্রতি দোকানেই আইনভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দোকানদারদের জরিমানা করলে জরিমানার টাকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানী দ্রুত ভর্তূকি দিয়ে যায়। কোম্পানীর প্রচারণা সামগ্রী সিগারেট ও তামাকজাত পন্য বিক্রয়কেন্দ্রে বা দোকানে পাওয়া যাবে সেক্ষেত্রে ঐ কোম্পানীকেই তার জন্য আইন ভঙ্গের জরিমানা দিতে হবে। তামাকজাত কোম্পানীর কোনো প্রচারণার পোস্টার, বিজ্ঞাপন বা সমজাতীয় কিছু পাওয়া গেলে সেটার জন্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানীকে দায়ী হবে এবং এটা তাদের অগোচরে/অজ্ঞতায় হয়েছে বলে দায় এড়াতে পারবে না। এবং এক্ষেত্রে দোকানদারকে লঘু শাস্তি দিতে হবে এবং সচেতনতা তৈরীতে কর্মসূচি চালাতে হবে।
বক্তারা সভায় আগামী দিনে করনীয় হিসেবে বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্যের অবাধ বিপনন তামাক নিয়ন্ত্রণে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। সকল পর্যায়ে তামাকজাত পণ্য বিক্রি করতে হলে লাইসেন্সিং বাধ্যতামূলক করতে হবে। এবং স্কুল, কলেজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হলে একই সাথে সরকারের যেমন রাজস্ব বাড়বে এবং তামাকের অবাধ বিচরণ অনেকাংশে কমে আসবে। লাইসেন্স বিহীন দোকানে তামাকজাত পণ্য বিক্রি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করতে হবে।