পাবনা প্রতিনিধি : মেছো বাঘ আটকের পর বাঘ হারিয়ে যাওয়ার গল্প হারানোর আগেই আবারও পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার মাজপাড়া ইউনিয়নের খিদিরপুর হাড়লপাড়া থেকে ৩ টি মেছো বাঘের ছানা উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার খবর পেয়ে পাবনার সামাজিক বন বিভাগ। বিকেলে রাজশাহী বন বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিচর্যা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে হাড়লপাড়া গ্রামে নেপিয়ার ঘাসের জমিতে মেছো বাঘের ছানাদের পড়ে থাকতে দেখেন মৃত মফিজ উদ্দিন খানের ছেলে জাফর ইকবাল। তারপর তিনি স্থানীয় সংগঠন ও বন বিভাগের নম্বরে ফোন করে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে যায়। খবর পেয়ে জেলা বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার রঞ্জিবুল আমিন ও ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলার বন কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাচ্চা তিনটি উদ্ধার করেন।
পাবনার সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে ফোন পেয়েই দ্রুত আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঘের বাচ্চাগুলো উদ্ধার করি। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সপ্তাহ খানেক আগে এই বাচ্চাগুলো জন্ম নিয়েছেন। বাচ্চাগুলো খুব ছোট হওয়ায় আমরা ফিডারে করে দুধ পান করিয়েছি। রাজশাহী অফিসের বন্যপ্রানী বিভাগের পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখার জন্য তাদের সাথে কথা বলে গাড়িতে করে বিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, কয়েকদিন আগেই একই উপজেলার মাজপাড়ার মন্ডলপাড়ায় আফজাল হাজীর আম বাগানে একটি সাড়ে ৪ ফুট লম্বা মেছো বাঘ আটক করে স্থানীয়রা। কিন্তু বাঘটি বন বিভাগের দেওয়ার আগেই আটঘরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান তানভীর ইসলাম নিজ জিম্মায় নিয়ে বন বিভাগের পৌছে দেয়ার কথা বলে ওই স্থান থেকে বাঘটি নিয়ে চলে আসেন। কিন্তু পথিমধ্যে বাঘটি লোহার খাচা ভেঙ্গে পালিয়ে গেছে বলে প্রচার করা হয়। ওই বাঘটি হারানোর মধ্যে রহস্য রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এনডাব্লিউসিসি’র পাবনা ইউনিটের সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাসও বাঘটি আটকের পর রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
পাবনার প্রকৃতি ও বন্যপ্রানী বিষয়ক সংগঠন নেচার এ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনসারভেশন কমিউনিটি (এনডাব্লিউসিসি) এর সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ জানান, স্থানীয়দের ফোনে ঘটনাস্থলে পৌছে ছানাগুলো দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি বাচ্চাগুলো মেছোবাঘের। এলাকা ভেদে এরা বাঘরোল বা মেছো বিড়াল নামেও পরিচিত। তিনি বলেন, এগুলোর ইংরেজি নাম ঋরংযরহম ঈধঃ, বৈজ্ঞানিক নাম চৎরড়হধরষঁৎঁং ারাবৎৎরহঁং। মাঝারি আকারের বিড়ালগোত্রীয় স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী এরা। তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক দশক আগেই বাঘরোলের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
তথ্যমতে, জনবসতি স্থাপন, কৃষিজমিতে রূপান্তর ও অন্যান্য কারণে বাঘরোলের আবাসস্থল জলাভূমিগুলো দিন দিন সংকুচিত ও হ্রাস পাওয়াই এর মূলকারণ। তাই আইইউসিএন ২০০৮ সালে মেছোবাঘকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাঘরোল সাধারণত নদীর ধারে, পাহাড়ি ছড়া ও জলাভূমিতে বাস করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এ ধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। এদের গায়ে ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকার জন্য চিতাবাঘ বলেও ভুল করে অনেকে।