তৌহিদ উদ দৌলা রেজা: তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর ব্যবস্থাপনা তামাক ছাড়ার প্রবণতাকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে। ‘তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও কর বাড়িয়ে এর সহজলভ্যতাকে সংকুচিত করা’ তামাক নিয়স্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী উপায় হিসাবে বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত। কিন্তু করারোপের পদ্ধতিগত সিমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশে এটি তেমন কার্যকর হচ্ছে না। তাই তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও তামাক ব্যবহার ত্যাগে উৎসাহিত করতে তামাক-কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা একথা বলেন। ৩০ মে সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) সম্মিলিতভাবে এই ওয়েবিনার আয়োজন করে।
“তামাক ব্যবহার ত্যাগে মূল্য ও করের প্রভাব” শীর্ষক এ ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন; মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধাপক এবং বিএনটিটিপি এর কনভেনর ড. রুমানা হক এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাটা’র সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ। ওয়েবিনারে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান; সিরাজগঞ্জ-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত ও গাইবান্ধা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী।
মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ; বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক ও নীতি বিশ্লেষক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। মূল প্রবন্ধে রুমানা হক বলেন, আমাদের দেশে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি অনুসরন করা হয়। পদ্ধতিটি জটিল ও ত্রুটিপূর্ণ। তাই এটি তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনা বা রাজস্ব বৃদ্ধিতে কাংখিত অবদান রাখতে পারছে না। বরং তামাক কোম্পানী অনাকাঙ্খিতভাবে লাভবান হচ্ছে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থেকে যাচ্ছে। অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে করারোপ করা হলে একই সাথে তামাকের ব্যবহার কমবে ও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। বিশ্ব ব্যাংকের একটি গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য প্রতি বছর ১০% হারে বৃদ্ধিতে এর ব্যবহার উচ্চ আয়ের দেশে ৪% এবং নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে ৮% কমে আসে এবং তরুনরা তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরুৎসাহিত হয়।
মো. হাবিবে মিল্লাত বলেন আমরা এখন ২০৪০ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণামত বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার জন্য কাজ করছি। সংসদে আমাদের সহযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ছে। দেশের মানুষের স্বার্থেই দেশকে তামাকমুক্ত করতে হবে। সম্মিলিত চেষ্টায় নিশ্চয়ই আমরা তা অর্জন করবো। শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ পেতে বিগত ৪ বছরে আমরা তেমন কিছুই অর্জন করতে পারিনি। বাকি দিনগুলোতে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপের কোনো বিকল্প নেই। আসন্ন অর্থবছর থেকেই এটা করতে হবে। এবং কর কাঠামোর বাইরে থাকা তামাকজাদ দ্রব্যসমূহকে কর জালের আওতায় আনতে হবে।
আতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে তামাক কর আদায়ের ক্ষেত্রে জিডিটাইলাইজেশনের অভাব রয়েছে। এ বাঁধা কাটিয়ে উঠতে পারলে অনেক বাঁধা কেটে যাবে। তবে দেশকে তামাকমুক্ত করতে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ কর বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের মধ্যে একটি ধক্কা দিতে হবে। যাতে স্বল্প মূল্যে তারা ক্রয় করতে না পারে। এতে তরুণরাও ধূমপান থেকে নিরুৎসাহিত হবে। মো. শাহাদৎ হোসেন মাহমুদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করণের ঘোষণা দিলেও কার্যকর হারে তামাক ব্যবহারকারী সংখ্যা কমছে না। এ জন্য উচ্চহারে কর বাড়ানো জরুরি। মিটিং সফটওয়ার জুম এ অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মকর্তা, তামাক নিয়ন্ত্রণ অ্যাডভোকেট ও উন্নয়ন কর্মীরা অংশ নেন।