পাবনা প্রতিনিধি : কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীর চিকিৎসা, মৃত সন্তান ও স্বজনদের জানাযায় অংশ নিতে ছুটি না দেয়াসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অসদাচরণ, মানসিক নির্যাতন, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে পাবনার বেড়ায় ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার ও সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। কর্মরতরা এ সকল কর্মকান্ডের প্রতিকার চেয়ে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রকে লিখিত ভাবে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে জানা যায়, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের এমদাদুল হক তার স্ত্রী সন্তান সম্ভাবা হওয়ায় শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্ত্রীর সুচিকিৎসা ও সুন্দর ভাবে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার লক্ষে তিনি ছুটির আবেদন করেন। কিন্তু তাকে ছুটি দেয়া হয়নি। এমদাদুল হকের অভিযোগ, ছুটি না পেয়ে তিনি স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারেননি। ফলে তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তান মারা যায়। এমনকি তাকে ওই সন্তানের জানাযাতেও যেতে দেওয়া হয়নি। অভিযোগে আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাথে একই ধরণের আচরণ করেছেন ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার জুলকার নাইন শাফি ও সহকারী প্রকৌশলী তারেক রহমান। নির্মম ও অমানবিক আচরণ করেছেন আরেকজন কর্মকর্তার সাথে। তার ভাবীর মৃত্যুর সংবাদ আসলেও তাকে ভাবীর জানাযায় যেতে দেওয়া হয়নি। আব্দুল লতিফ নামের আরেক জনের সাথেও একই ধরণের নির্মম ও অমানবিক আচরণ করেছেন তারা।
একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাথে আলাপকালে তারা জানান, ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার ও সহকারী প্রকৌশলীর সকল অনৈতিক ও অনিয়মতান্ত্রিক কর্মকান্ডে যারা সমর্থন দেবেন কেবল তারাই তাদের আস্থাভাজন ও কাছের হয়ে যান। কেবল তারাই অফিসিয়ালি সকল সুযোগ সুবিধা প্রাপ্ত হন। আর যাদের দিয়ে অনৈতিক, অনিয়মতান্ত্রিক ও দূর্নীতির কাজ করাতে ব্যর্থ হন, তাদের উপরে চালান ক্ষমতার অপব্যবহার। নির্মম মানসিক নির্যাতন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত কর্মকর্তারা ওই প্রতিষ্ঠানে নিজেদের তৈরী করা নিয়মকানুন চালু করেছেন। করোনা ভাইরাতে লকডাউনকে কেন্দ্র করে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রে তৈরী করা হয়েছে আলাদা আলাদা নিয়মকানুন। নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদ রেজা (যান্ত্রিক), তার কাজের বুয়া ও আয়া, সুইপার, সহকারী প্রকৌশলী তারেক রহমান সরকারের স্বাস্থ্য বিধি তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গমন-আগমন করেন। তারা অন্যদের মধ্যে প্রচার করেন, ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার জুলকার নাইন শাফির লোক আমরা। আমাদের জন্য স্পেশাল অর্ডার পাশ করা আছে।
ফিডার-বি তে কর্মরত রবিউল করিম জানান, উপকেন্দ্রটির প্লান্ট প্রায় ৭ থেকে ৮ মাস বন্ধ। জরুরী অথবা লকডাউনের নামে তিনি চালান শ্রমিকদের উপর অমানবিক নির্যাতন, জুলুম আর হয়রানী। ডরমিটরীতে শ্রমিকদের আটকে রেখে কাজ দেখিয়ে দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজে যোগদান করতে চাইলেও তাদের কারণে কাজে যোগ দিতে পারছেন না। এমনকি কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের পরীক্ষার জন্য কর্মচারী ও শ্রমিকেরা অনুরোধ করলেও তাদের সে অনুরোধের কোন মূল্য দেয়া হয়নি। উল্টো তাদের উপর নেমে এসেছে নানা ধরণের নির্যাতন। করোনা টেস্ট না করিয়ে জোরপূর্বক কাজে যোগদান ও ডরমিটরিতে আটকে রাখায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে আছেন শ্রমিক কর্মচারীরা এমন অভিযোগ তাদের। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বেড়া ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার জুলকার নাইন শাফি জানান, শ্রমিক-কর্মচারীদের যথা সময়ে কাজে যোগদান ও মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে বলায় তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে শুরু করেছে। অনৈতিক সুযোগ সুবিধা না দেওয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটিয়ে বিভ্রান্তি করছে ।
এদিকে বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসিফ আনাম সিদ্দিকী ও বেড়া পৌর মেয়র আব্দুল বাতেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বিডি২৪বিউজ কে বলেন, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বিউবোর উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নিকট পাঠানো হবে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।