মাহফুজ আলম,কাপ্তাই : রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধ্বসের তিন বছরেও ঝুঁকি কাটেনি পাঁচটি ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকার বাসীন্দাদের। এখনো মুত্যুকুপে বসবাস করছে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা কযেক হাজারেরও বেশী পরিবার। পাহাড়ের মানুষ গুলোকে মৃত্যুকুপে থেকে বের করতে প্রশাসনের উদ্যোগের কথা থাকলেও ৩ বছরেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে পাহাড়ের চুড়ায় এবং খাদে। আবারো বৃষ্টিপাত শুরু হলে বড়ো ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার ঢাকাইয়া কলোনি। লকগেইট,মুরালিপাড়া, কারিগর পাড়া, মিতিঙাছড়িসহ শীলছড়ির মানুষ।
ভয়াবহ ১৩ জুন ২০১৭ সালের এই দিন পাহাড় ধবসে কাপ্তাইসহ রাঙ্গামাটিতে প্রাণ হারায় নারী ও শিশু সহ ১২০ জন। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে প্রাণ হরায় ৫ সেনা কর্মকর্তা। এই দিনটির কথা মনে পড়লে মানুষের মনে চলে আসে অঝোড়ে কান্না। পাহাড় ধ্বসের তিন বছর পার হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ে আসায় দ্বারে-দ্বারে ঘুরে নিরাশ হয়ে আজো পাহাড়ের পাদদেশে প্রাণের ঝুঁকিতে বসবাস করছে মানুষ।
উল্লেখ্য স্মরণ করতে হয় অতীতের ঘটনালী ২০১৭ সালের ৯ জুন থেকে অবিরাম বৃষ্টি শুরু হয়। ১২ জুন বিকালে রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকায় পাহাড় ধ্বসে একজনের প্রানহানী ঘটে। রাত যতই বাড়তে থাকে বৃষ্টি ও বজ্রপাত আরো বেশী বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় রাতভর পাহাড় ধ্বসের ফলে রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি, ভেদভেদী, আসামবস্তী, মানিকছড়ি, সাপছড়ি, কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্হান. নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধ্বসে মারা যায় ১১৫ জন। ঐদিন সকালে রাঙ্গামাটি শহরের মানিকছড়ি এলাকায় রাস্তা সংস্কার করতে গিয়ে পাহাড় ধ্বসে পড়ে নিহত হয় মেজর মোঃ মাহফুজুল হক, ক্যাপ্টেন মোঃ তানভীর সালাম শান্ত, কর্পোরাল আজিজুল হক, সৈনিক মোঃ শাহীন আলম ও মোৎ আজিজুর রহমান।
এদিকে ২০১৮ সালে নানিয়ারচর উপজেলাও পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটে। নাণিয়ারচর উপজেলার সাপমারা এলাকায় পাহাড় ধ্বসে একই পরিবারের ৪ জন সহ মারা যায় ১১ জন। তিন বছর আগে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যূ হয়। কিন্তু সেই মৃত্যু কূপে পূনরায় ঘরবাড়ি নির্মাণ করে ঝুকিপূর্ন অবস্থায় বসবাস করছে। মানছে না প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাঙ্গামাটি জেলার বিভিন্ন স্থানকে ঝুকিপূর্ন এলাকা হিসেবে চিহিৃত করে সচেতনামূলক সাইনবোর্ড দিয়েছে।
২০১৭ সালের ১৩ জুন ভারী বর্ষনের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনায় মাটি চাপা পড়ে ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা, মুসলিম পাড়া, শিমুলতলী এলাকা, সাপছড়ি, মগবান, বালুখালী এলাকায় এবং জুরাছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যূ হয়। এতে জেলায় ১৬’শ থেকে ১৭’শ ঘরবাড়ি সম্পূর্ন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পাহাড় ধসের কারণে সারাদেশের সাথে সড়ক যোগযোগের এক সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন থাকার পর হালকা যানবাহনের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এছাড়া পাহাড় ধসে ২০১৮ সালে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নে ১১জন এবং ২০১৯ সালে কাপ্তাই উপজেলায় ৭জন প্রাণ হারায়।
ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুকিপুর্ন এলাকা বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ না করতে নিষেধ করে সাইন বোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে সর্তক করা হয়েছে কিন্তু তারপরও সেই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না মানুষ। তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে বসবাস করতে দেখা গেছে। অতি বৃষ্টিপাত হলে নিকটবর্তী নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে। এদিকে কাপ্তাই উপজেলায় বসবাসরত কয়েক জন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না বলা শর্তে বলেন সরকার যদি সমতল জায়গার ব্যাবস্হা করে এ ঝুঁকিপুর্ন জায়গা তারা ছেঁড়ে দিবে।ওইসব এলাকার লোকজনদের সচেতনামূলক অংশ হিনেবে পাহাড় ধস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সচেতনা সৃষ্টিসহ ঝুকিপূর্ন এলাকায় বসবাস ও স্থাপনা নির্মানের নিষেধাজ্ঞা জারি করে সাইন বোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কাপ্তাই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনসাধারনের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি করতে মাইকং করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনে পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে থাকা ঝুকিপূর্ন লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র করা হয়েছে। সেখানে আশ্রয়ের সময় খাওয়া-দাওয়া ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া যেস সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় তার জন্য বসবাসের প্রস্তুত রাখতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রাঙ্গামাটিতে ২০১৭,১৮ ও ১৯ সালেও পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছিল। এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত এক মাস যাবত বর্ষাকে কেন্দ্র করে পাহাড় ধ্বসের বিষয়ে জনগনকে সচেতন করার জন্য সকল কার্যক্রম গ্রহন করে আসছি। রাঙ্গামাটির প্রতিটি উপজেলায় যে সমস্ত পাহাড়ে ঝুকিপূর্ন বসবাস রয়েছে সেগুলো চিহিৃত করেছি। এসব এলাকায় বসবাসকারী ঝুকিপূর্ন লোকজনদের ভারী বর্ষনের সময় অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারি তার কাজ শুরু করেছি। এছাড়া ঝুকিপূর্ন এলাকাগুলো চিহিৃত করে সাইন বোর্ড টাঙ্গানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে মিটিং করেছি। এতে সকল প্রস্তুতি গ্রহন করেছি যখন দুর্যোগ আসবে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটবে সেই সব এলাকা থেকে লোকজনদের অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার যায় তার জন্য কমিটি গঠন, সেচ্ছাসেবদক দল গঠন করে দিয়েছি। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের চিকিৎসার সেবা দেয়ার জন্য মেডিকেল টিম গঠন করেছি। এখানে প্রশাসন,পুলিশ ফায়ার সার্ভিস.জনপ্রতিনিধিসহ সকলের সমন্বয়ের মাধ্যমে এইসব কাজ করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, যেহেতৃ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে সেহেতু আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে তাদেরকে কিভাবে রাখতে পারি সেই বিষয়ে আমাদের চিন্তাধারা রয়েছে। সেজন্য এবারের অনেকগুলো অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছি। সেইসব কেন্দ্রগুলো যাতে বসবাসের উপযোগী, স্যানিটেশন উপযোগী করে রাখার জন্য জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি।