মেহেদী হাসান আকন্দ: নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে গৃহবধুর লাশ রেখে স্বামী-শাশুড়ী ও দেবর পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সৃস্টি হয়েছে রহস্য। গত সোমবার (২১জুন) বেলা ২টায় অসুস্থ্য রুপালী আক্তার (২০) কে নিয়ে নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালে আসেন স্বামী আলামিন(৩০), শাশুড়ী হামিদা বেগম ও দেবর এনামুল। রুপালী আক্তার বিষপাণ করেছে বলে কর্তব্যরত ডাক্তার মাহমুদুর রহমানকে জানানো হয়। কর্তব্যরত ডাক্তার মাহমুদুর রহমান দ্রুত রুপালী আক্তারের স্টোমাক ওয়াশ করে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
স্বজনরা রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে রোগী মারা গেলে লাশ রেখে স্বামী, শাশুড়ী ও দেবর দ্রুত হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
হাসপাতাল থেকে ভিকটিম রুপালী আক্তারের বাবা গৌরীপুর থানার হিম্মতনগর গ্রামের কাজিম উদ্দিনকে রুপালী আক্তারের মৃত্যুর খবর ফোনে জানানো হলে কাজিম উদ্দিন ২১জুন পূর্বধলা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-০৫।
গৃহবধু রুপালী আক্তারের বিষপাণে আত্মহত্যা নাকি পরিকল্পিতভাবে হত্যা এ নিয়ে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গৌরীপুর থানার হিম্মতনগর গ্রামের কাজিম উদ্দিনের মেয়ে রুপালী আক্তার (২০) কে পূর্বধলা থানার জুগিরগুহা গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে আলামিন (৩০) প্রায় ২বৎসর পূর্বে সামাজিকভাবে বিবাহ করেন। বিবাহের পর তাদের সংসারে রয়েছে ৭মাসের একটি পুত্র সন্তান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শি প্রতিবেশী জানান, ২১জুন সোমবার সকাল থেকে গৃহবধু রুপালী আক্তারকে স্বামী আলামিন, শাশুড়ী হামিদা বেগম ও দেবর এনামুল শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনে অতীষ্ট হয়ে রুপালী বাড়ী থেকে বেরিয়ে বাবার বাড়ীতে যাওয়ার চেষ্টা করলে আলামিনের চাচাতো ভাই চানহর আলীর ছেলে সিরাজ মিয়া ও হাবিবুর রহমানের ছেলে হুমায়ন রুপালীকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। সকাল অনুমান ১০টায় স্বামীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে রুপালী আক্তার মা নিলুফা আক্তারকে ফোন করলে আলামিন মোবাইল কেড়ে নেয়। গোপন ক্যামেরায় ধারনকৃত ভিডিওতে আলামিনের মা হামিদা বেগমকে বলতে শুনা যায়, নেত্রকোণা আধুনিক সদর হাসপাতালের ডাক্তার রুপালীর বিষপাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছেন, রুপালীর মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে দেখে বিষপাণের অনুমান করে তারা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রতিবেশী জানান, রুপালীর বিষপাণের ঘটনা এলাকায় কেউ জানেনা। বিষপাণ নাকি জোর করে মুখে বিষ ঢালিয়ে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা সঠিক তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে। এদিকে জুগিরগুহা গ্রামের ফজলুর রহমানের বাড়ীতে রুপালীর মৃত্যুকে বিষপাণে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। জানা যায়, আলামিন পাশর্^বর্তী বাঞ্জা গ্রামে ইত:পূর্বেই একটি বিবাহ করেছিল। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য বার বার নির্যাতনের ফলে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় যৌতুকের টাকা ফেরৎ দিয়ে তাদের মধ্যে তালাক হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিয়ে করেন রুপালী আক্তারকে। রুপালী আক্তারের মা নিলুফা আক্তার জানান, যৌতুকের জন্য রুপালীকে নির্যাতন করায় গত ২০-২৫দিন পূর্বে স্থানীয় সমিতি থেকে ৪৫হাজার টাকা ঋণ নিয়ে জামাই আলামিনকে যৌতুক দিয়েছেন।
রুপালীর মৃত্যুতে পূর্বধলা থানায় একটি অপমৃত্যু দায়ের হলেও হাসপাতালে রুপালীর লাশ রেখে পালিয়ে আসার পর হাসপাতাল থেকে লাশ গ্রহণে কিম্বা লাশ দাফনের সময় আলামিনের পরিবারের কেউ উপস্থিত না থাকায় এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলেই ধারনা করছেন স্বজনরা।
রুপালীর মৃত্যুতে পূর্বধলা থানায় অপমৃত্যু দায়েরের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানান, পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ শিবিরুল ইসলাম।