চুয়াডাঙ্গা থেকে পলাশ উদ্দীন : মেহেরপুরে অপহরণের পর এক লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবির হোসেনকে (১১) শাঁস রোধ করে হত্যা করা হয়। অপহরণকারীদের দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা দিতে চাইলেও সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি মা। গত শনিবার মধ্যরাতে স্থানীয় একটি পাটক্ষেতে শিশুটিকে হত্যা করে লাশ ফেলে দিয়ে যায় দুবৃত্তরা। হত্যার সাথে জড়িত সকলের শাস্তি ও হত্যাকারীদের হুমকি থেকে রক্ষা পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিশুটির মা রোজিনা খাতুন।
বুধবার বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রোজিনা খাতুন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমি একটি গরু বিক্রি করি এবং আমাদের এলাকার মেম্বার নুহুনবী তা জানতে পেরে আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু আমি তাদেরকে চাঁদা দিতে অস্বীকার করি। এরই জের ধরে শনিবার (২৬ জুন) বিকেলে আমার ছেলে আবির হোসেন (১১) খেলাধুলা করতে বাড়ির বাইরে যায়। এ সময় মিনাপাড়ার মেম্বার নুহুনবীর ইশারায় তার ছেলে হামীম (১৫) ও একই এলাকার মিরাজের ছেলে মুজাহিদ (১৬) পূর্বপরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেলযোগে আমার ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘পরে সন্ধ্যা হয়ে এলেও ছেলে বাড়িতে না ফেরায় আমরা তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে হামীম ও মুজাহিদ সন্ধ্যার পরে আমার স্বামীর মোবাইলে কল করে আবিরের মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ টাকা দাবি করে। তখনো আমরা তাদের কথায় কোনোরূপ কর্ণপাত ও বিশ্বাস না করে এলাকায় খোঁজাখুঁজি করার সময় জানতে পারি আমাদের এলাকার মেম্বার নুহুনবীর ছেলে হামীম ও মিরাজের ছেলে মুজাহিদ আমার ছেলেকে অপহরণ করে মোটরসাইকেলগোগে তুলে নিয়ে আটকিয়ে রেখেছে। এই খবর পাওয়ার পর আমরা মেম্বার নুহু নবীর বাড়িতে গেলে নুহু নবী ও তার লোকজন আমার দেবর ও ভাইদেরকে গালিগালাজ ও মারধর করে।
এ সময় তারা আমাদেরকে হত্যার হুমকিও দেয়। আমরা নুহু নবীর ভয়ে বাড়িতে এসে পুলিশকে খবর দেই এবং পুলিশকে সাথে নিয়ে আবারো মেম্বার নুহু নবীর বাড়িতে যাই। এরই মধ্যে হামীম ও মুজাহিদ আমার ছেলে আবিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাঠের মধ্যে ফেলে রেখে বাড়িতে চলে আসে। আমরা পুলিশের সাথে মেম্বারের বাড়িতে পৌঁছে জানতে পারি হামীম ও মুজাহিদ ঘরের মধ্যে দরজা বন্ধ করে আছে। পুলিশ ঘর থেকে বের করে আবিরের কথা জিজ্ঞাসা করলে তারা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে তারা আমার ছেলে আবিরকে অপহরণ করেছে এবং মাঠের মধ্যে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে।’
ওই দিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ মাঠের ভেতর থেকে আবিরের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে আমরা ওই আসামি হামীম ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নেই। তখন হামীমের বাবা মেম্বার নুহু নবী ও মুজাহিদের বাবা মিরাজ বিভিন্নভাবে আমাদেরকে ফোন করে বিভিন্ন রকমের হুমকি-ধামকি এবং হত্যা করার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মামলা দায়ের করতে বাধা দেয়। তাদের বাধা অবজ্ঞা করে আমরা মামলা দায়ের করার পর থেকে তারা আমাদেরকে জান-মালের হানীসহ খুন জখমের হুমকি-ধামকি এবং আমাদের বাড়ি ঘরে বোম মেরে উড়িয়ে দিবে বলে হুমকি দিচ্ছে। নুহু নবী ও মিরাজ এলাকার প্রভাবশালী লোক এবং তারা বিভিন্ন প্রকার সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় গ্রামের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে কোনোরকম মুখ খুলছে না। এমতাবস্থায় আমি আমার সন্তানের হত্যাকারী হামীম ও মুজাহিদ এবং এদের সাথে জড়িত থাকা সকল আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাসহ আমরা যাতে এলাকায় সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারি।
উল্লেখ্য, গত ২৬ জুন এক লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আবির হোসেনকে (১১) অপহরণ করা হয়েছিল। অপহরণকারীদের দাবিকৃত মুক্তিপণের টাকা দিতে চাইলেও সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি মা। ওইদিন মধ্যরাতে স্থানীয় একটি পাটক্ষেতে শিশুটিকে হত্যা করে লাশ ফেলে যায় অপহরণকারীরা। নিহত শিশু আবির হোসেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরিষাডাঙ্গা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আসাদুল ইসলামের ছেলে। বর্তমানে আসাদুল ইসলামের স্ত্রী রোজিনা খাতুন তার বাবা রেজাউল হকের বাড়ি গাংনী উপজেলার মিনাপাড়াতে থাকেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ষোলটাকা ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) নুহু নবীর ছেলে স্কুলছাত্র হামিম হোসেন (১৫) ও মিরাজ হোসেনের ছেলে মুজাহিদকে (১৬) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।