তৌহিদ উদ দৌলা রেজা : নগরে শাক-সবজির যোগান বাড়াতে নগর কৃষি নীতিমালা প্রণয়ন করে উৎপাদন, মজুত, বিপনন, পরিবহনখাতে ভর্তুকী প্রদান নিশ্চিত করতে হবে, যা স্বল্প মূল্যে নগরবাসীদের প্রয়োজনীয় তাজা সবজির যোগান নিশ্চিত করবে। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সবজি এবং ফলমূল উৎপাদনকারী দেশ হলেও, দেশের জনগোষ্ঠী প্রয়োজনের তুলনায় কম তাজা-ফল ও শাক সবজি গ্রহণ করছে। প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি ও ফল গ্রহণ করানো সম্ভব হলে ২.৭ মিলিয়ন মানুষের জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। সোমবার সকাল ১১টায় সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্স (সিএলপিএ) এবং আর্ক ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে ‘নগরে তাজা শাকসবজি নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন, নীতিমালা : প্রতিবন্ধকতা ও করণীয় ’ শীর্ষক শিরোনামে এক ওয়েবিনারে দেশের জনস্বাস্থ্য নীতি বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক আইনজীবী সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তাজা, শাকসবজি গ্রহণে নাগরিকদের উৎসাহী করা জরুরি। নগরে তাজা শাকসবজি নিশ্চিতে বিদ্যমান আইন, নীতিমালা সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, আট (৮) মন্ত্রণালয়ের ষোলটি (১৬) টি খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত নীতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জাতীয় পুষ্টিনীতি ব্যতীত প্রায় সকল নীতিতেই তাজা-শাকসবজি যোগানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। নীতিমালায় নগরে তাজা-শাকসবজির যোগান নিশ্চিতে কোন ধরনের ভতূর্কী বা সহযোগিতার প্রদানের সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার পাওয়া যায়নি। এছাড়া আইন সংক্রান্ত গবেষণায় ৩১ টি আইন বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তাজা-সবজি বিষয়ে কৃষি বিপনন আইন, ভোক্তার অধিকার আইন এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ব্যতীত অন্য আইনে সারাসরি কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বা সুপষ্টভাবে কোন বিষয় উল্লেখ নেই। প্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সহযোগিতা এবং সরাসরি ভর্তুকির বিষয়ে কোন ধরনের বিধান পাওয়া যায়নি।
বক্তারা বলেন বাংলাদেশ এনসিডিসি রিস্ক ফ্যাক্টর সার্ভে ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৮৯.৬ শতাংশ প্রতিদিন প্রয়োজনীয় ৫ ধরনের ফল ও সবজি গ্রহণ করে না। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন ফল গ্রহণ করে মাত্র ০.৪ শতাংশ মানুষ এবং প্রয়োজনীয় সবজি গ্রহণ করে মাত্র ২.৩ শতাংশ মানুষ। বর্তমানে দেশে ৬৭ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামণজনিত রোগ। এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে দেশকে ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তাজা ফল ও শাকসবজি গ্রহণের সাথে প্রাপ্তি ও দামের একটি নিবীড় সম্পর্ক রয়েছে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণে উৎসাহী করতে কর হ্রাস এবং ভর্তুকি প্রদান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক্ষেত্রে অস্বাস্থকর ও জাঙ্কফুড নিয়ন্ত্রণ করতে নিরুৎসাহিত কর আরোপ, বিজ্ঞাপন ও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্যদিকে তাজা শাকসবজি গ্রহণে উৎসাহী করতে কর বিলোপ, ভর্তূকী প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি তাজা-শাকসবজি বিষয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তকর প্রচারণা বা ভ্রান্ত বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে। সাধারণ কৃষকরা যাতে ভতূর্কী পায় সেই বিষয়গুলো নিশ্চিতের জন্য সুপারিশ করেন। নগর কৃষিতে উৎসাহী করার ক্ষেত্রে বাড়ীয় ছাদগুলো ব্যবহার করার কথা যেতে পারে, সেই ক্ষেত্রে কৃষির উপকরন সহজে যাতে নিশ্চিত করা হয় সেদিকে সরকারের সহযোগিতা জরুরি। বাড়ির ছাদে সবজির চাষ নিশ্চিত করা যেতে, নগরে সবজির যোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার এমপি বলেন, তাজা শাকসবজি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। তাজা-সবজির উপর ভতূর্কী দিতে হবে এবং ট্রান্সফ্যাট, অস্বাস্থ্য খাবার এবং তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বাড়াতে হবে। নগরে বাড়িতে বাড়িতে কৃষি উৎসাহী করা হলে বাজারের উপর চাপ কমবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সিএলপিএ এর উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুলের সঞ্চালনায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক ড. রুমানা হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। আলোচক হিসেবে ছিলেন গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউভেটরের কান্ট্রি লিড মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস, স্ট্রেট ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. নওজিয়া ইয়াসমিন ও গ্রিন সেভারসের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি, খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষ্ণগ ইমরুল হাসান, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-র কৃষক বাজারের সমান্বয়ক জিয়াউর রহমান, হাটাবাজারের উদ্যোক্তা তুষার চন্দন, পুষ্টি বিশেষ্ণগ তামান্ন শারমিন প্রমুখ।এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ওয়েবিনারে অংশগ্রণ করেন।