পাবনা প্রতিনিধি : পাবনায় কোরবানী হাটগুলোতে পশু আমদানী থাকলেও ক্রেতাশুন্যতায় জমে উঠেনি। করোনা সংক্রমণ রোধে জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে ডিজিটাল কোরবানী পশুর হাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা দেখা দেওয়ায় কোবরানী পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন গরুপালনকারীরা। আর দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের সংকট।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডল জানান, কোরবানী ঈদ ঘিরে পাবনা জেলায় দুই লাখ ৪০ হাজার কোরবানী পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। এবারে জেলায় ২৬ টি হাটে কোরবানীর পশু ক্রয়বিক্রয় হবে। প্রত্যেকটি হাট ভেটেনারী মেডিকেল টিম থাকবে। সুস্থ পশু ক্রয়ে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করা হবে। পাশাপাশি অসুস্থ পশু কেনা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।
সরেজমিনে পাবনা সদরের আরিফপুর হাজিরহাট, টেবুনিয়া, পুষ্পপাড়া, ঈশ্বরদীর আওতাপাড়া, অরনকোলা, বেড়ার চতুর হাট, কাশিনাথপুর, চাটমোহরের রেলবাজার, ভাঙ্গুড়ার শরৎনগরসহ বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটগুলোতে নানা দামের ও নানা রংবেরংয়ের কোরবানীর পশু উঠেছে। কিন্তু বিক্রেতারা ক্রেতা সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাটে অবস্থানের পর বিক্রি না হওয়ায় পশুগুলো নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
সুজানগরের সাতবাড়িয়া পদ্মাপাড়ে প্রায় ২০ মন ওজনের দুটি ষাড় নিয়ে বিপাকে আছে ষাড় মালিক আশু শিকদার। তিনি বলেন, প্রতিবারেই তিনি দুটি করে গরু পালন করেন। ঈদের আগে বাইরের একাধিক বেপারী এসে তার গরু দেখে কিনে নিয়ে যান। কিন্তু করোনার কারনে বাইরের ব্যাপারী না আসায় তিনি গরু দুটি নিয়ে বিপাকে আছেন।
হাজিরহাটের বাদশা মিয়া বলেন, বাড়িতে ১৫ টি করে গরু পালন করি। কোরবানীর সময়ে বিক্রি করি। কিন্তু কোন ক্রেতা বাড়িতে না যাওয়ায় হাটে এনেছি। কিন্তু লোকই নেই, গরুর দাম বলবে কে? চাটমোহরের রেলবাজারের গরু বিক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, করোনা, বৃষ্টি-বন্যা পিছু ছাড়ছে না। তারপরও গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে গরু পোষাই দায় হয়ে গেছে। ক্রেতা নেই জন্যই গরু বিক্রি করতে পারিনি। দিন যত এগুচ্ছে চিন্তা বেড়ে যাচ্ছে।
কয়েকজন গরু খামারীর সাথে আলাপকালে তারা বলেন, প্রতিটা ক্ষেত্রেই করোনার প্রভাব পড়েছে। তেমনি কোরবানী পশুর উপর পড়বে ভাবতে পারিনি। আশপাশে পানি উঠে আসায় গরু রাখা হয়ে পড়েছে গলার কাটা। তারপর গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ সংকট দেখা দেওয়ায় গরু বিক্রি ছাড়া বাড়িতে রাখা বড়ই পীড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আটঘরিয়া পৌর গরু হাটের ইজারাদার বলেন, এবারে হাট জমেনি। আর জমবে বলে মনে হচ্ছে না। আশপাশের প্রচুর গরু আমদানী হচ্ছে। কিন্তু বিক্রি নেই। ফলে এবারে আমরা হাট নিয়ে কাংখিত লাভের মুখতো দুরে থাক, আর্থিক ক্ষতি দেখছি।
এদিকে জেলা তথ্য অফিসের প্রচার যন্ত্র দিয়ে পাবনায় প্রচার চালানো হচ্ছে অনলাইনে কোরবানী পশু ক্রয় করার জন্য। এতে করে করোনা সংক্রমণ রোধ হবে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে গরু ক্রয় করতে হাটে স্বল্প পরিসরে যাওয়ার জন্য এবং অনলাইনের মাধ্যমে গরু ক্রয় করে সংক্রমণ রোধে আহবান জানানো হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন অনলাইনে কোরবানী পশু ক্রয়বিক্রয়ের জন্য অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করেছে। বিক্রেতারা তাদের কোরবানী পশুর বিস্তারিত ছবিসহ অনলাইনে আপলোড দিলে খুব সহজেই ক্রেতারা অনলাইন থেকে পশু ক্রয় করতে পারবেন। এদিকে জেলার সুজানগরে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরের উদ্যোগে অনলাইনে ডিজিটাল গরুর হাট চালু করেছেন। এতে ব্যাপক সাড়াও পড়েছে।
স্থানীয় খামারী ও কলেজ শিক্ষক ইমদাদুল হক বলেন, আমার ৩০ টি গরুর খামার আছে। এবারে গরু নিয়ে খুব সমস্যায় পড়েছি। তবে এমপি সাহেবের অনলাইনের গরু হাটে ছবি, ভিডিও তথ্য দিয়ে বেশ সাড়া পাচ্ছি।
জেলার সচেতন মহল কোরবানী পশুর হাটে উপস্থিতি নিয়ে সঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। একাধিক সচেতন ব্যক্তির সাথে আলাপকালে তারা বলেন, শুনেছি হাটে স্বাস্থ্য বিধির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কার্যত কোন হাটে সে ধরণের স্বাস্থ্য বিধির বালাই নেই। বরং গরু কিনতে আসা মানুষগুলো থেকে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে এমন ধারণাই তাদের।
এ ব্যাপারে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মেহেদী ইকবাল বলেন, হাটগুলোতে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলার সমন্বয় সভায় জেলার প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে শুধু প্রশাসনই নয়, হাটের ইজারাদার, স্বেচ্ছাসেবকসহ সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে।
আর জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সবাইকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। আর করোনা সংক্রমণ রোধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলার কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সজাগ দৃষ্টি রেখে সামাজিক দায়বদ্ধতায় কাজ করতে হবে এমনটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।