মো: রবিউল ইসলাম খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না কারায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গোসল খানা ও শৌচাগারগুলো। বেসিং এ জমে আছে কালো দই যুক্ত নোংরা পানি, স্যাঁতসেঁতে আইরন যুক্ত দেয়াল। গোসল খানা ও শৌচাগার ময়লায় দুর্গন্ধ পরিবেশ। বিকল্প উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে প্রয়োজন সারতে গিয়ে অসুস্থ হয়ার ঝুঁকিতে রোগীর স্বজনরাও। শুধু তাই নয়, ৩১ শয্যা বিশিষ্টি হাসপাতালটির স্বাস্থ্য সেবা খাতেও রয়েছে পর্যাপ্ত চিকিৎসকসহ জনবল সংকট।
উপজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য রয়েছে মাত্র চার জন চিকিৎসক। এতে চিকিৎসকসহ নানা সংকটে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে রোগীদের নিয়ে সদর হাসপাতালসহ জেলার বাহিরে ছুটছেন স্বজনরা। তবে এজন্য স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
জানা যায়, মেঘনা নদীর উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই নিম্ন আয়ের মৎস্য ও কৃষিজীবী। উপকূলের প্রায় চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসার স্থল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে প্রথমে ২০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হলেও, পরবর্তীতে তা ৩১ শয্যায় উন্নিত করা হয়।
কিন্তু উন্নত হয়নি চিকিৎসা সেবার মান। ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বেসিং, গোসলখানা ও শৌচাগার গুলো। এছাড়াও উপজেলার চার লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য রয়েছে মাত্র চারজন চিকিৎসক। বেশির ভাগ পদই খালি রয়েছে। মহামারির এ মুহুর্তে সেবা বঞ্চিত হয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চরাঞ্চলের নিরিহ মানুষগুলো। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে ছুটছেন পাশের জেলা নোয়াখালীতে।
সরেজমিনে দ্বিতলা বিশিষ্ট রামগতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনের ভেতরে ঘুরে দেখা যায়, ওয়ার্ড গুলোতো ভাবসা দূরগন্ধ। যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা। দ্বিতলায় মহিলা ওয়ার্ডের গিয়ে দেখা যায় দুটি বেসিং এ কালো দই যুক্ত নোংরা পানি জমে আছে, দুটি গোসলখানা ও তিনটি শৌচাগার ময়লায় ভর্তি। নোংরা পানি ও আইরন যুক্ত হয়ে স্যাঁতসেঁতে মেঝে ও দেয়াল।
একই অবস্থ পুরুষ ওয়ার্ডসহ অনান্য শৌচাগারগুলোর। জরুরী প্রয়োজন সারতে গিয়ে দুর্গন্ধে শাহেদুল নামে এক রোগীর স্বজনকেও বমি করতে দেখা গেছে। এদিকে পর্যাপ্ত রোগী থাকলেও চিকিৎসা সেবায় নেই পর্যাপ্ততা। দু’একজন নার্স ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা সহ দেখ-বাল করতে দেখা যায়। ৩১ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মোট জনবলের পদ সংখ্যা ১২৩টি। এর মধ্যে শূণ্য রয়েছে ৬৩টি পদ।
আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামনাশিস মজুমদার। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, সার্জারি অ্যানেস্থেসিয়া ও গাইনি চিকিৎসকসহ ৪টি পদ এখন পর্যন্ত শূন্য। খালি রয়েছে দু’জন মেডিকেল অফিসার ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) পদটি। নার্সের ১৩টি পদের মধ্যে ১১ জন থাকলেও খালি রয়েছে দুটি পদ, মিডওয়াইপারি (নরমাল ডেলিবারীর জন্য) ৪টি পদের মধ্যে ৩টি পদই শূন্য। এছাড়াও দীর্ঘদিন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট এক্স-রে টেকনিশিয়ান পদগুলো খালি, স্বাস্থ্য সহকারী ৪৩টি পদের মধ্যে ১৮টি পদ শূণ্য, স্টোর কিপার, অফিস সহকারী (কম্পিউটার অপরেটর), হিসাবরক্ষক, ওয়ার্ডবয়, এমএলএসএস, পিয়ন, সুইপারসহ বিভিন্ন পদ শূন্য। এছাড়াও স্বাস্থ্য পরির্দশক ২টি পদের মধ্যে আছেন একজন। সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ৯টি পদের মধ্যে ৩ জনের পদই শূণ্য পড়ে আছে।
হাসপাতালটিতে প্রতি মাসে উপকূলের এক হাজারেরও বেশি রোগী চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়ে থাকেন। আউটডোরে চিকিৎসার জন্য আসেন মাসে প্রায় ১০ হাজার রোগী। এছাড়াও ৩০ থেকে ৪০ জনের নরমাল ডেলিভারি হয়। রোগীর এত চাপ থাকলেও চিকিৎসক ও জনবল সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্টদের।
রোগীর স্বজনরা ক্ষোব প্রকাশ করে জানান, ২০ শয্যা অবকাঠামো দিয়ে চলেছে পুরো হাসপাতাল। তবে আগে হাসপাতালের চিকিৎসা দরকার।পরে রুগীদের চিকিৎসা। একদিকে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশ অন্যদিকে চিকিসৎসক/ডাক্তার পাওয়া যায় না। অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট কর্তাদের উদাসীনতায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাই করোনা মহামারিতে উপকূলের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাক্তার ও জনবল নিয়োগের দাবী জানা তারা।
সেবায় কর্মরত দু’জন নার্স জানান, দূরাবস্থা থাকলেও কিছু করার নেই। পর্যাপ্ত জনবল সংকটের সমস্যা দীর্ঘদিনের। যে হারে প্রতিদিন রোগী বাড়ে, সে হারে সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত সময়ও সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামনাশিস মজুমদার বলেন, যে হারে রোগীর চাপ, সে হারে পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই। যে ক’জন রয়েছে তাদের দিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার চেষ্টা করা হয়। তাছাড়া ৮ জন মেডিকেল অফিসারসহ ১৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও, মাত্র ৪ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে পুরো চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে হয়। করোনাকালে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। বিষয়টি উপরস্থ সবমহলই জানে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবদুল গফ্ফার বলেন, চিকিৎসক ও জনবল শুধু লক্ষ্মীপুরেই সংকট নয়, সারা দেশে একই অবস্থা। তবে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই সমস্যা সমাধান হবে।