মো. হুমায়ুন , গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) : গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের অধিকাংশ ভবন এমন জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
ভবন সংকটে জোড়াতালি দিয়ে চলছে গৌরীপুর উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের কার্যক্রম। ডরমিটরি ব্যবহার করা হচ্ছে কার্যালয় হিসেবে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ পরিত্যক্ত হয়ে আছে কয়েকটি আবাসিক ভবন। কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা চললেও সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে বিএডিসি, ইউটিডিসি, এলজিইডি ভবন ও উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষ। জোড়াবাড়িসহ বেশির ভাগ আবাসিক ভবন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব ভবনে কর্মকর্তা–কর্মচারীরা বসবাস না করায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপজেলা পরিষদ। রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়সহ আরও কিছু স্থাপনা।
জানা গেছে, গৌরীপুর উপজেলায় প্রথম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয় ১৯৮৫ সালে। এর পূর্বে থানা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এর আগে ১৯২৭ সালে গঠিত হয় গৌরীপুর পৌরসভা। একমাত্র পাবলিক হলটিও জরাজীর্ণ ও ভঙ্গুর থাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৮০ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জানে আলম খান গৌরীপুর গণমিলনায়তন ও পাঠাগার উদ্বোধন করেন। কিন্তু ৪১ বছরেও পাঠাগার পায়নি মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, অল্প সময়েই জরাজীর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে স্থাপনাটি। রঙের আবরণে বাইরে চাকচিক্য থাকলেও ভেতরের অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পলেস্তারা খসে পড়ছে। অনুষ্ঠান মঞ্চটি ধসে যাওয়ায় নিচে বসে করতে হয় সভা-সেমিনার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় সংরক্ষণ করা হয়নি দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়িগুলো। সরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠেনি কোনো গণপাঠাগার, সংগীত একাডেমি ও নাট্যশালা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে বিএডিসি ভবন, ইউটিডিসি ভবন, উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষ।
জোড়াবাড়ি নামে আরও দুটি আবাসিক ভবন জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনোমতে টিকে আছে। ২০১৭ সালে পরিত্যক্ত ভবনগুলো বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় নিলাম বাতিল হয়ে যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউটিডিসি ভবনের এলজিইডি, সমবায় ও খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় উপজেলা ডরমিটরি ভবনে স্থানান্তর করা হয়েছে। ফলে অবিবাহিত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বাইরে বেশি ভাড়া দিয়ে থাকতে হচ্ছে। সভাকক্ষ পরিত্যক্ত হওয়ায় অফিসার্স ক্লাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সভা-সেমিনার।
গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, ‘ইতিমধ্যে বেশ কিছু ভবনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আরও কিছু ভবন আছে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। সংস্কার বাবদ যে বরাদ্দ আসে তা পর্যাপ্ত নয়। শিগগিরই নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি।’
উপজেলা প্রকৌশলী আবু সালেহ মো. আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, ‘পরিত্যক্ত ভবনগুলো নিলামে বিক্রি করতে শিগগিরই পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো মেরামতের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, ‘ভবন সংকটের কারণে দৈনন্দিন কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। সভাকক্ষ বা ট্রেনিং সেন্টার না থাকায় বিভিন্ন দপ্তরের প্রশিক্ষণ প্রদানে সমস্যা হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই প্রস্তাবনা পাঠিয়ে সংকট দূর করা যাবে।’