যশোর প্রতিনিধি : ধলা বিবি দুর্বল শরীর, লাঠিতে ভর করে চলাচল বয়স ৮০ ছুই ছুই । এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে করেন ভিক্ষা। চাল-টাকা এটা-ওটার পাশাপাশি পান, যাকাতের শাড়ি। কয়েক যুগ ধরে একাকি বৃদ্ধা এ মানুষটির জীবন চলে ভিক্ষা করে। ভিক্ষা থেকে আয়ের বড় অংশ আবার দান করেন মানবকল্যাণে।
পরোপকারী হৃদয়বান ধলা বিবির বাড়ি অভয়নগর উপজেলা শ্রীধরপুর ইউনিয়নের বর্ণী গ্রাম সংলগ্ন নড়াইল জেলার বিছালী গ্রামে। ধলা বিবির মানব কল্যাণমূলক কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে সমাজের সচেতন মহল বলছেন, ভিক্ষুক ধলা বিবির এমন কাজ সমাজের জন্য শিক্ষাণীয়। তার দানের পরিমান সামান্য হলেও নিয়মিত দান ও মানুফযল সহযোগিতার মূল্য অপরিসীম।
ধলা বিবি সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, শুধু সামর্থ্য থাকলে হয় না, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ও উদার মানসিকতা থাকতে হয়। তিনি সমাজের জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সরেজমিনে ধলা বিবির বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সকালে না খেয়ে মানুষটি ভিক্ষা করতে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সম্বল বলতে রয়েছে পরিত্যাক্ত টিন আর বাঁশ দিয়ে তৈরী ছোট্ট একা কুড়ে ঘর। একটি খাট, কাঁথা, বালিশ আর পুরাতন কয়েকটি অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি, জগ, মগ, মাটির কলস ও একটি মাটির চুলা।
কানে কম শোনা ধলা বিবির ভিক্ষ করার কারণ জানতে চাইলে বলেন, ভিক্ষা কি আর এমনি এমনি করি। আমার দেখার কেউ নেই। ৪০ বছর আগে স্বামী জালাল মোল্যার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বাপের বাড়ি চলে আসি। একটা ছেলে ছিল সেও মারা গেছে। আমি একা। ভিক্ষা করে আয় করা চাল-টাকা-কাপড় দান করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মরে গেলে সাথে কিছু যাবে না। আমি চাইয়ে চিন্তে চলি।
কেউ টাকা দেয়, কেউ চাল দেয়, যাকাতের শাড়ি দেয়, আবার কারো বাড়ি গেলি কয়ডা খাতি দেয়। খরচ-খরচা করে যা থাকে তা এতিমখানা, মসজিদ ও অসুবিধায় থাকা মানুষেগের দিয়ে দেই। মানুষের জন্য কিছু করতি পারলি আল্লাহ খুশি হয়।’ বিছালী গ্রামের শরিফা বেগম জানান, ধলা বিবি একজন ভালো মানুষ। ভিক্ষা করে পাওয়া টাকা, শাড়ি, চাল অসহায় মানুষদের দিয়ে দেন। কয়েকদিন আগে আমারেও কেটা শাড়ি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় আয়েশা সিদ্দিকীয়া মাদরাসা ও এতিমখানার সুপার ক্বারী মোস্তফা কামাল বলেন, এলাকাবাসী ওনাকে ধলা ফুফু বলে ডাকেন। বৃদ্ধা মানুষটি মাঝে মধ্যে মাদরাসায় আসেন এবং এতিমদের জন্য কয়েকশ করে টাকা ও চাল দিয়ে যান। তার দানের পরিমান কম হতে পারে। কিন্তু তার এ ভিক্ষা করে দান করার বিষয়ে অনেকে আশ্চর্য হন। ধলা ফুফুর দান করা দেখে সমাজের অনেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে তিনি মনে করেন।
বিছালী গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কার মোল্যা বলেন, ধলা বিবি ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে ভিক্ষা করছেন। ভিক্ষার শুরু থেকে তিনি মানবকল্যাণে কাজ করে আসছেন। ধলা বিবি ভিক্ষাবৃত্তির ভেতর দিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভালো মন্দের খোঁজ খবর নেন। সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেন। শেষ বয়সে একাকি এ বৃদ্ধা মানুষটির জন্য সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।