রিমন পালিত: বান্দরবান প্রতিনিধি: মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। তবে প্রতি বছরের ঈদের চিত্র আর এবারের এই ঈদের চিত্র যেন আকাশ-পাতাল তফাৎ। কারো মধ্যে নেই কোন উচ্ছ্বাস। নেই কোন প্রস্তুতি। রাত পোহালেই ঈদ। যেখানে ঈদুল ফিতরের পরপরই অনেক ঘরে চলে ঈদ-উল- আযহার প্রস্তুতি। চলে নানা জল্পনা-কল্পনা। এই যেমন গরু, ছাগল, মহিষ কি কোরবানি করবে।কত টাকায় কোরবানি করা হবে,বাজেট অনুযায়ী টাকা জমানো, মসলাপাতি কেনা আর সেগুলো শুকিয়ে গুড়ো করার মতন নানা প্রস্তুতি।
নির্মমধ্যবিত্ত পরিবার গুলোতে সেই চিরচেনা ব্যস্ততা আর নেই। প্রতি বছর কোরবানি করত এমন অনেক পরিবারে নেই কোন সাড়া শব্দ। এবারের কোরবানি নিয়ে কি ভাবছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন। করোনাকালীন সময়ে কথা হয় বান্দরবান জেলার শহর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্থানীয় এবং অস্থায়ী কিছু লোকজনের সাথে। আলোচনা করে জানা যায়,যারা প্রতিবছরই পালন করেন ঈদুল আযহা এদের মধ্যে ৯০ ভাগ পরিবারেই এবার নেই কোন প্রস্তুতি।
কারন বৈশ্বিক এ করোনা মহামারিতে অনেকেই চাকুরি হারা অবস্থায় আছেন। দীর্ঘদিন বেকার হয়ে থাকায় জমানো টাকা ভেঙ্গে খেয়েছেন অনেকেই তারা। প্রবাসীরা কোরবানি করতে ছুটে আসেন প্রবাস থেকে তারাও পারছেন না। বান্দরবান সদরের একজন চাকরিজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, সামান্য চাকুরি করতাম হঠাৎ করেই চাকুরিটা চলে যাওয়ায় এবারে কোরবানি দিতে পারছি না। এ জন্য ছেলে-মেয়েদের কি উত্তর দিব ভেবে পাচ্ছি না। বান্দরবান কালাঘাটা এলাকার পারভিন নামের এক গৃহিনী বলেন,তার স্বামী কাপড়ের ব্যবসা করত।কিন্তু করোনা আসার পর থেকে বেচা-কেনা নাই বলতেই চলে। প্রতি বছর পশু কোরবানি দিলেও এবার দেয়া হচ্ছে না। এই সময় প্রতি বছর মসলা বাটায় ব্যাস্ত থাকলেও এবার আর সেই অবস্থা নেই।
বজলুল করিম কিন্ডার গার্ডেন এর রিয়াদুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক বলেন, আমি একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের শিক্ষক। প্রতিবছরই কোরবানি দিয়ে থাকি কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কোন বেতন-ভাতা না পাওয়ায় জমানো টাকায় এবং ধার দেনা করে কোন রকমভাবে বেঁচে আছি। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে আর তাকানোর সাহস হারিয়ে ফেলেছি তাদের প্রশ্নের উত্তরের ভয়ে। এদিকে কোরবানি না দেয়ায় পশু নিয়ে অনেক খামারীরাও পড়েছে বিপাকে। দীর্ঘদিন ধরে লালন-পালন করার পরও পশু বিক্রি না হওয়ায় বেশ চিন্তিত তারা। বাকি ছড়া এলাকার রাসেল নামের এক খামারী বলেন,ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০ টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। মাত্র ১২ টি গরু বিক্রি হয়েছে। বাকিগুলো বিক্রি না হলে খাওয়ার খরচ কিভাবে জোগাব ভেবে পাচ্ছি না।