মো. হুমায়ুন কবির, গৌরীপুর ময়মনসিংহ : বাংলাদেশে তিন মৌসুমে ধানের চাষ করা হয়- আউশ, আমন ও বোরো মৌসুম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৯-১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের উৎপাদন করা হয়। যেহেতু আউশ ধানের আবাদ বৃষ্টি নির্ভর, সেহেতু এ ধান উৎপাদনের সেচ খরচ সাশ্রয় হয়। তাছাড়া উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের ধান চাষ করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয় আউশ ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা ও ভর্তুকি প্রদান করছে। এতে অধিক সংখ্যক কৃষক আউশ ধান চাষে উৎসাহী হবেন বলে আশা করা যায়। বোরো ও আমন ধান চাষের ফাঁকা সময়ে সোনালী ধানের ঘ্রাণে হাসছে কৃষকরা। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা দেড় শতাধিক কৃষক। শুরু করেছে আউশ ধান কাটার উৎসব। ধানের বাম্পার ফলন ও বাজার মূল্য পেয়ে কৃষকের মুখে ফুটেছে সোনালী হাসি।
উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফুন্নাহার জানান, এ বছর ১৫৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় ব্রিধান-৪৮, ব্রিধান-৮৫ ও বিনা ধান- ১৯ রোপন করা হয়েছে। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় ও ধানের বাজার দর ভালো থাকায় আগামীতে আবাদ আরো বাড়ছে।
উপজেলার ডৌহাখলা ইউনিয়নের নন্দীগ্রামের কৃষক মো. আবুল হাশেম জানান, তার ফলন ভালো হয়েছে। তিনি ৩৩শতাংশ জমিতে ব্রিধান-৪৮ চাষ করেছিলেন। তাঁতকুড়া গ্রামের কৃষক হায়দার হোসেন ৫০শতাংশ জমিতে বিনা ধান- ১৯ রোপন করেছেন। এ জমিতে ধান হয়েছে ২০ মণ। তিনি জানান, আসলে আমার ইচ্ছে ছিলো না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে করেছি। খুব ভালো ফলন হওয়ায় মনটা ভালো হয়ে গেছে। এছাড়াও উপজেলার মাওহা, অচিন্তপুর, সহনাটী, মইলাকান্দা, বোকাইনগর ও সিধলা ইউনিয়নেও সরজমিন ঘুরে দেখা যায় এ বছর আউশের ফলন ভালো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সহনাটী ইউনিয়নের ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মোতালেব বলেন, জমিতো পরিত্যক্তই থাকতো, আউশ কাটা শেষে এখন আমন রোপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ফাঁকা সময়ে ধান ভালোই পেয়েছি।
কলতাপাড়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার সুমন চন্দ্র সরকার জানান, আধুনিক উচ্চ ফলনশীল জাত সসম্প্রসারণ ও সুষম সার ব্যবস্থাপনা লক্ষ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের অধিনে এ প্রদর্শনী করা হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে আউশ ধানের আবাদ প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছিলো। কিন্তু বোরো ধান কাটার পর আমনের আবাদের এ ফাঁকা সময়টাকে কাজে লাগতে এ অঞ্চলের আউশের আবাদ নতুন করে শুরু হয়েছে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে এ অঞ্চলে আউশ আবাদ হয়েছিল ৫৫ হেক্টর জমিতে। ২০১৯-২০ মৌসুমে চাষ হয় ৮৬ হেক্টর জমিতে। দুই বছরের ব্যবধানের আবাদ ৩গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ভূগর্ভস্থ পানির অপচয় রোধ করে বৃষ্টির পানিকে কাজে লাগিয়ে আউশ আবাদকে জনপ্রিয়করণের জন্য বর্তমান সরকারের নানান পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে আউশ আবাদ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে সরকারি প্রণোদনায় বিনামূল্যে আউশ ধানের বীজ ও সার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা, উচ্চ ফলনশীল জাতের আউশ ধানের বীজের প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়া এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে কৃষক উদ্বুদ্ধকরণ ও নিবিড় মনিটরিং এর ফলে সেচ সাশ্রয়ী আউশের আবাদে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।