মো. হুমায়ুন কবির,গৌরীপুর প্রতিনিধি : রঙিন স্বপ্নের শিক্ষার ভুবন ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজ বিদ্যাপীঠ। ১৯৬৪ সালের ১আগস্ট এ বিদ্যাগঞ্জের যাত্রা শুরু করে। এই কলেজের ছাত্র সংসদের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস, অর্জন, বীরত্ব, সাহসিকতা, সংগ্রামে অকুতোভয়ের দৃষ্টান্ত। তারুণ্যের জয়ের উল্লাসে অসম সাহসী শিক্ষার্থীরা ৬৬’র ৬দফা, ৬৯’র গণঅভূত্থানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
সারাদেশের ন্যায় এ কলেজের শিক্ষার্থীরা গণঅভ্যূত্থানের মিছিল বের করে। তৎকালীন পাকিস্তান পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান এ কলেজের তরুণ শিক্ষার্থী নান্দাইলের আজিজুল হক হারুন। যার নাম অনুসারে হারুণ পার্ক নামকরণ করা হয়। ১৯৭০সনে কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত ও পূর্ণাঙ্গ ডিগ্রী কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৬৬সনে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড এইচ.এস.সি পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করে।
১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন মদনের আব্দুল আজিজ। কলেজ ক্যাম্পাসটি পাকহানাদারের অত্যাচার রুখতে প্রশিক্ষণ শিবির হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের অংশ নেন এ কলেজের ছাত্র ফজলুল হক ভিপি ফজলু, মোঃ মজিবুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মোহাম্মদ আজাদ, সিরাজুল ইসলাম, কাউরাটের আঃ কদ্দুছ সহ অনেকেই।
এ কলেজের ছাত্র সংসদ ছিলো নেতৃত্বের বিকাশ, যোগ্য নেতা তৈরির কারখানা আর ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ের প্লাটফরম। শুধু কলেজের নয়, গৌরীপুরের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায়ও ভূমিকা রেখে আসছিলো এই ছাত্র সংসদ। যার নির্বাচন ২০বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।
কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচনে কটিয়াদীর চাঁদপুরের উকিলবাড়ীর কামরুল ইসলাম ভিপি ও রামগোপালপুরের সাহেদ আলী ফকির জিএস নির্বাচিত হয়। ২য় ভিপি ছিলেন রামগোপালপুরের নাট্যকার আব্দুল হাই, জিএস ফজলুল হক, ৩য় ভিপি ভাংনামারীর আব্দুল মোতালেব, জিএস কাজী আশ্রাব আলী আর ৪র্থ ভিপি ছিলেন ফজলুল হক ও জিএস ইকবাল হাসান। গৌরীপুর রাজনৈতিক অঙ্গনে কলেজ সংসদের নির্বাচিত ভিপি, জিএস নানা পদে অধিষ্ঠ। সাবেক ভিপি ফজলুল হক, কাজিম উদ্দিন, আব্দুস সাত্তার, ইউনুস আলী, দেওয়ান কাঞ্চন খান, আব্দুল আউয়াল, আবুল কালাম, বেগ ফারুক আহাম্মেদ, সামছুল হক (দুইবার), মাহফুজউল্লাহ, ফারুক আহাম্মেদ, মাহবুবুর রহমান শাহীন ও সর্বশেষ নির্বাচিত সাবেক ভিপি শহিদুল ইসলাম অন্তর আওয়ামী লীগ-বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। সদ্য প্রয়াত হন সাবেক ভিপি ও অচিন্তপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম অন্তর। এ সংসদের নেতৃত্ব বিকাশের রয়েছে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তবে গৌরীপুর সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ২০০০-০১ নির্বাচনে সর্বশেষ ভিপি শহিদুল ইসলাম অন্তর ও জিএস মাজহারুল ইসলাম টুটুল। এরপরে একাধিকবার নির্বাচনের জন্য আন্দোলন হলেও হয়নি নির্বাচন। একবার নির্বাচনের জন্য তফসিলও ঘোষণা করা হয় তবে আলোরমুখ দেখেনি নির্বাচন। এ প্রসঙ্গে সাবেক জিএস মাজহারুল ইসলাম টুটুল বলেন, এ কলেজে প্রতিবছর দু’টি বা তিনটি ছাত্র সংসদ প্যানেলের মাধ্যমে শতাধিক নেতার জন্ম হতো। এই কলেজের ছাত্রনেতারাই জনপ্রতিনিধি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ আসনে দায়িত্ব পালন করছেন। আজকে এ সংসদের নির্বাচন না হওয়াটা দুঃখজনক। আমি মনে করি নেতৃত্বের বিকাশ ও গৌরীপুরের রাজনৈতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রয়োজন।
কলেজের শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায় ও নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কলেজ শাখার সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূলে নয়। তারপরেও বলবো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কলেজ শাখার আহ্বায়ক মো. জিকু সরকার বলেন, করোনাকালীন দুর্যোগে শিক্ষার্থীদের অবস্থা নিয়ে আমরা কিছুই করতে পারছি না। ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীরা অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক অধিকার, নতুন নেতৃত্বের বিকাশ ও কলেজের উন্নয়নের জন্যই ছাত্র সংসদ প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নানাখাতে ফিস নেয়া হচ্ছে অথচ সেই সব কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। তারা বারবার তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন কলেজ শাখার সম্পাদক নাঈমা জাহান প্রীতি জানান, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা দেয়াল লিখন, পোস্টারিং করেছি। শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন অতীব জরুরী প্রয়োজন। করোনাকালীন এ দূর্যোগ কেটে গেলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবীতে জোরালো আন্দোলন করবো। তিনি আরো বলেন, এ কলেজের ছাত্রীদের জন্য হোস্টেল নেই। বাহিরের আসা শিক্ষার্থীরা মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বাহিরের মেছে থাকা ব্যয়বহুল ও অনিরাপদ। অথচ আমরা তাদের অধিকার নিয়ে কোনো কথা বলতে পারছি না।