মোঃ সুজন বিশ্বাস কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবণতি ঘটেছে। উপজেলার দুই ইউনিয়নের অন্তত প্রায় ২৩ টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে গ্রামগুলোর প্রায় ৯ হাজার পরিবারের ৩২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রায় ১১০শ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। নিরবচ্ছিন্ন ভাবে পানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকায় প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন পদ্মা চরের মানুষ গুলো। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে দু-তিন দিনের মধ্যেই পদ্মার পানি বিপদ সীমা অতিক্রম করবে বলে অনেকেই আশংকা প্রকাশ করেছেন। এদিকে মড়িচা ইউনিয়নের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও বস্তা দিয়ে ভাঙন নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি প্রতিদিন প্রায় দশমিক ১২-১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিপদ-সীমার দশমিক ৩৭ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এদিকে দৌলতপুর উপজেলার ভাগজোত পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদীতেও অব্যাহত ভাবে পানি বাড়ছে। আরো কয়েক দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে বলে পাউবো সূত্র জানিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের মতে, রামকৃষ্ণপুর, চিলমারী ও মরিচা ইউনিয়নের ফসলি জমিতে পানিতে পানি ঢুকে প্রায় ১১০শ হেক্টর জমির আউস ধান, কলা, পাট অন্যান্য ফসল ক্ষতি মুখে পড়েছে। সরেজমিনে বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে শুধু পানি আর পানি। আকস্মিক বন্যায় মাঠের ফসলের সাথে সাথে মাথা গোঁজার থাঁই-টুকুতেও পানি ঢুকে পড়েছে। অনেকের বাড়ির উঠান ও ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় বাড়িতে বাস করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে ঘরের ভিতরে বাঁশের মাচা ও নৌকার উপর মানুষকে বসে থাকলে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ বাড়িঘর ছেড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসা বা উচুঁ জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে, উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলেও ভাঙন নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, সর্বশেষ ২০১৯ সালে পদ্মার পানি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। তবে গত বছর বন্যার পানি না বাড়ায় কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন পদ্মাপাড়ের মানুষেরা। এবার আবার পদ্মা রুদ্র রুপে আবির্ভূত হয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে অচিরেই লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াকুব আলী জানান, দু’দিন আগেও যেসব এলাকা শুকনা ছিল। এখন সেখানে পদ্মার পানিতে থৈই থৈই করছে। অনেকের বাড়িতে রান্না করার জায়গাটুকুও ফাকা নেই। ফলে তাদের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল ও চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, চরাঞ্চলের অন্তত ২৫টি গ্রামে অধিকাংশ বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। দুই ইউনিয়নের ৯ হাজার পরিবারের প্রায় ৩২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, পানিবন্দি মানুষের তথ্য সংগ্রহ করে দ্রুত তাদের সহায়তা করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দৌলতপুর আসনের সাংসদ অ্যাড. আ. ক. ম. সারওয়ার জাহান বাদশাহ বলেন, পদ্মায় হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার চার ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। সব সময় তাদের খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। পানিবন্দি এসব মানুষকে বাচাঁতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ঔষধসহ জীবন রক্ষাকারী সামগ্রী প্রয়োজন। চরাঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী শেল্টার সেন্টার নির্মানের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানান।