রিমন পালিত : বান্দরবান প্রতিনিধি: আদিবাসী শব্দটি অনেক প্রাচীন হলেও এ শব্দের রয়েছে সংস্কৃতি । যাকে ঘিরে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে। প্রতিবছর ৯ আগস্ট নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বান্দরবানে বেসরকারীভাবে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করে থাকলেও এই বছর মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে বিশাল আয়োজন পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বান্দরবান আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটি।
দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার আদায়ের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
আদিবাসী নেত্রী উমেচিং বলেন, আদিবাসী অধিকার আদায়ের দিবসটি নামে মাত্র উদযাপন ছাড়া আর কিছু নয়। যেদিন এ রাষ্ট্র আদিবাসীদের যথাযথ স্বীকৃতি দিয়ে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজেদের আত্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়ার অধিকার প্রদান করবে, সেদিনই সত্যিকার আদিবাসী দিবস উদযাপিত হবে।
আরেক আদিবাসী নেতা লুসাইন মং বলেন, এই পার্বত্য অঞ্চলে সরকার কর্তৃক ঘোষিত শান্তিচুক্তি সফলভাবে বাস্তবায়িত না হলে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার কখনও ফিরে আসবে না। তাই অত্র এলাকার শান্তির প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে অচিরে চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মত দেন এই নেতা। করোনা প্রদুর্ভাব কারণে এবারে ছোট পরিসরে আন্তজাতিক আদিবাসী দিবস আয়োজন করা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বান্দরবান আদিবাসী দিবস উদযাপন কমিটি’র আহবায়ক লেলুং খুমী।
তিনি জানান, করোনা সংক্রমণের কারণে সরকারের পক্ষ থেকে জনসমাগম না করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই আমরা আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে জনসমাগম এড়াতে কোন ধরণের মিটিং, মিছিল ও আলোচনা সভা করছি না। তবে ছোট পরিসরে ভার্চুয়েল লাইফে প্রোগ্রাম করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আদিবাসী হিসেবে অধিকার আদায়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবির বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে।
উল্লেখ্য যে, প্রতিবছর আগস্ট মাসের ৯ তারিখ বিশ্বব্যাপী পৃথিবীর প্রায় নব্বইটি দেশে ৩৭০ মিলিয়ন আদিবাসী জনগোষ্ঠী এ দিবসটিকে তাদের নিজেদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি উপস্থাপনের পাশাপাশি তাদের নানান দাবি-দাওয়া নিজ নিজ রাষ্ট্রের সামনে এবং বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেন। এরই ধারবাহিকতায় বান্দরবানেও পালন করে থাকেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী।
আমরা নিজেরা যারা আদিবাসী বলে দাবি করি, আমরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়ে এই আন্দোলন অব্যাহত রাখব। এছাড়াও যারা আমাদেরকে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী বানিয়েছে তাদের সম্পর্কে পার্বত্য জেলায় প্রান্তিক জায়গায় বসবাসকারী আদিবাসীরা জানে না। তারপরও আমরা যারা এসব বিষয়ে সচেতন আছি, প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা মেসেজ দিতে চাই আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘সরকার সংখ্যালঘু, সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। তাই সরকারের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আশা করব এই সরকার ভুল-বিভ্রান্তি বুঝতে পেরে অন্যান্য দেশের মতো আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেবে।