বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সুনামগঞ্জের হাওরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে হাওরে উড়াল সড়ক। ২০১১ সালে জেলার তাহিরপুরে কৃষক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন গোপালগঞ্জ আর সুনামগঞ্জ আমার কাছে সমান। উন্নয়ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া হাওরবাসীর উন্নয়নে আন্তরিকভাবে কাজ করতে চাই। প্রধানমন্ত্রী হাওরবাসীকে যেকথা দিয়েছিলেন সেই কথা রেখে কাজে বাস্তবায়ন করে নজির সৃষ্টি করছেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদে সুনামগঞ্জের কৃতী সন্তান সাবেক সচিব ও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এম এ মান্নানকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দিয়ে অবহেলিত সুনামগঞ্জের উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছেন। এম এ মান্নান পরিকল্পনা মন্ত্রণায়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করারও দায়িত্ব দেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, নার্সিং ইনস্টিটিউট, বিআরটিএ ট্রেনিং সেন্টার, ম্যাটস, সুনামগঞ্জের পাগলা-রানীগঞ্জ-আশারকান্দি সড়কের রানীগঞ্জ সেতুসহ বিপুল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এ ছাড়াও ছাতকের সুরমা সেতু, বিশ্বম্ভরপুরের ফতেহপুর আবয়া সেতুর পুনঃর্নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সুনামগঞ্জ সিলেট সড়ক প্রশস্তকরণের প্রায় ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনা মহাসড়কের মান্নানঘাট থেকে গুলাগ্রাম হয়ে ধর্মপাশার মধুপুর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার স্থানে গভীর হাওরে উড়াল সেতুসহ রাস্তা নির্মাণ এবং দিরাই-শাল্লা সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি চলতি মাসেই একনেকের সভায় অনুমোদন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে সুনামগঞ্জ থেকে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত অল্প সময়ে স্বল্প খরচে আসা-যাওয়া সম্ভব হবে হাওরবাসীর।
সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সরকারের সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্য মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এই প্রকল্পে প্রায় ১০৭ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন সড়ক নির্মিত হবে। আরো ২৮ কিলোমিটার ডুবন্ত সড়ক, ইউনিয়ন ও উপজেলা সড়ক সংযোগ থাকবে। উপজেলা সড়কে দুই হাজার ৯৮৭ মিটার ও ইউনিয়ন সড়কে ৬৮৫ মিটার সেতু এবং ৭৭৫ মিটার কালভার্টও নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সবকিছুই হবে দৃষ্টিনন্দন ও চোখ ধাঁধানো। প্রকল্পটি চলতি মাসেই একনেকে অনুমোদিত হওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারণ হাওরের প্রকৃতি বিবেচনা করেই বিরল উড়াল সড়ক নির্মাণের কাজ প্রধানমন্ত্রীর মাথা থেকেই এসেছে। উড়াল সড়কের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে হাওরাঞ্চলের মানুষের ব্যবসা ও পর্যটনের দ্বার উম্মোচিত হবে। সহজেই দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা সুনামগঞ্জে প্রবেশ করে হাওরের উড়াল সড়ক দিয়ে নেত্রকোনা হয়ে ঢাকায় চলে যেতে পারবে।
এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বেসরকারি উদ্যোক্তারা হোটেল-মোটেল নির্মাণ, হাওরে ঘুরার জন্য নৌকা-স্পিডবোটসহ নানা জলযান তৈরি করবে এবং হাওর পারের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারিভাবে উড়াল সড়কের দুইপাশে কিছু দুর ‘ইয়ূথ হোস্টেল’ গড়ে তোলা হবে। টিনসেডের বাংলো টাইপের হোস্টেলও থাকবে। সেখান থেকে দেখা যাবে হাওরের প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। সেই সাথে হোস্টেলগুলোতে নিরাপদ পানি ও রান্নাবান্নার ব্যবস্থা থাকবে। ‘হাওর এলাকায় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প নিয়ে এখন কাজ চলছে পুরোদমে। এ প্রকল্পের প্রাথমিক প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকও করেছেন। প্রকল্পের বিভিন্ন দিক যাছাই-বাছাই কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী একান্ত চিন্তাভাবনা থেকে হাওরে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। যার কারণে উড়াল সড়কটির নাম হবে ‘শেখ হাসিনা উড়াল সড়ক’। একনেকে অনুমোদনের পর নামকরণের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। দিরাই থেকে শাল্লা আজমিরিগঞ্জ-বানিয়াচং-হবিগঞ্জ হয়ে হাওরের বুকচিরে একটি মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার পর কাজও শুরু হয়ে গেছে। মোহনগঞ্জ-নেত্রকোণার সাথে একটি এবং দিরাই-হবিগঞ্জের সাথে আরেকটি মহাসড়ক হলে হাওরের যোগাযোগ চিত্র পাল্টে যাবে।
হাওরের কারণে এই জেলার অধিকাংশ উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এসব উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হাওরবাসীকে আর উন্নয়নে পিছিয়ে থাকতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী হাওরবাসীর উন্নয়নে যা যা করা দরকার তাই করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাহিরপুরের কৃষক সমাবেশে হাওরবাসীর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তারই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে হাওরের মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের কৃতী সন্তান পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ এম এ মান্নান এমপি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাওরবাসীকে ভালোবাসেন বিধায়, বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাকে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করছি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুনামগঞ্জকে আর অবহেলিত জেলা হিসেবে আখ্যায়িত করবে না। সুনামগঞ্জ হবে পর্যটকদের জন্য উত্তম স্থান। দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো পর্যটক ও প্রাকৃতিক প্রেমীরা ছুটে আসবেন এবং হাওরপাড়ের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।