মাহফুজ আলম, কাপ্তাই ( রাঙামাটি) নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন ধরে নানানমুখি সংকটে এশিয়ার মহাদেশের মধ্যে অন্যতম কর্ণফুলী পেপার মিলস (কেপিএম)।এক-সময়ের এ খ্যাতিমান কারখানাটি ১৩০ মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদন সক্ষম ছিল এ মেলটি।বর্তমান পেক্ষাপটে উৎপাদন নেমে আসে ২০ থেকে ২৫ টনে। এ অল্প কাগজগুলোর বিক্রির ব্যাপারে হিমশিম খেতে হচ্ছে কেপিএম কর্তৃপক্। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মূদ্রণালয়ে কেপিএমের উৎপাদিত কাগজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রয় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও স্বল্প উৎপাদিত এই কাগজও বিক্রি হচ্ছে না সময় মতো।
অবিক্রীত থাকার কারণে কারখানার গোডাউনে পড়ে থাকা হাজার টন কাগজ নষ্ট হচ্ছে দিনের পর দিন। কেপিএমের উৎপাদিত কাগজ বিক্রি না হওয়ার কারণে নিজের আক্ষেপ ও হতাশার কথা জানিয়ে আব্দুর রাজ্জাক ফেসবুকের নিজ ওয়ালে দীর্ঘ এক বক্তব্য পোস্ট করেছেন কেপিএমের সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক অব্দুর রাজ্জাক। দীর্ঘ ওই পোস্টে তিনি বাংলাদেশ ক্যামিকাল কপোর্রেশনসহ (বিসিআইসি), শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকারে উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। রাজ্জাক তার পোস্টে সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেন, স্বাধীনতার আন্দোলন সংগ্রামের স্মৃতি বিজড়িত শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন অন্তর্ভুক্ত এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড বর্তমানে কাগজ বিক্রয় সংকটে মত্যুর দ্বারপ্রান্তে।
তিনি আরো বলেন দেশিও বাঁশ—কাঠ দিয়ে মণ্ড (পাল্প) তৈরি মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি মাত্র কাগজ উৎপাদনকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং কাগজের গুণগত মানের কারণে বাজারে প্রচুর চাহিদা ছিলো। কেপিএম এর রেজিস্ট্রেশনকৃত ডিলার পার্টি অগ্রিম টাকা প্রদানের পরেও কাগজ সরবরাহ করা সম্ভব হতো না। কারণ সরকারের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বাজারে কাগজ সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এতে কেপিএম এর রেজিস্ট্রেশনকৃত ডিলার পার্টি অকেজো হয়ে যায় এবং তারা কাগজের প্রাইভেট কোম্পানির বাজারের দিকে চলে যায়।
প্রাইভেট কোম্পানির দৌরাত্ম এবং তারা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে স্বল্প-মানের কোনোরকম কম্পিউটার লিখার যোগ্য কাগজ উৎপাদন করে বাজারে কম মূল্যের ফলে কেপিএমের গুণগত মানের উৎপাদিত কাগজ বিক্রয় সংকটে পড়ে। কারখানার লাভ—লোকসান ভারসাম্য রাখতে গিয়ে দৈনিক খরচের বিপরীতে নূন্যতম পঞ্চাশ টন কাগজ উৎপাদন করতে হয়। বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার টনের বেশি উৎপাদিত কাগজ জমা পড়ে আছে বিক্রয় হচ্ছে না। অবিক্রিত কাগজের কারণে উৎপাদন হ্রাস করে কোনোরকম চালু রেখেছে, উৎপাদন হ্রাসের কারণে গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত লোকসান, বাড়ছে দেনার বোঝা।
এশিয়ার সর্ববৃহৎ কাগজ কল কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেডকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে যে, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাগজ ব্যবহার করা হয়। যেমন প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রমে সরকারের বিনা মূল্যে বই বিতরণ এনসিটিবি, বিজিপ্রেস, শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, নির্বাচন কমিশনসহ সব প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড থেকে কাগজ ক্রয় করতে হবে।
সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড থেকে কাগজ ক্রয় করে আসছে। কিন্তু কোভিড ১৯, মহামারি কারণেই শিক্ষা বোর্ড, বিশ্ববিদ্যালয়, নির্বাচন কমিশন কাগজ নিচ্ছে না। তার মধ্যে শুধু প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে বিনা মূল্যে বই বিতরণ অব্যাহত রয়েছে । কিন্তু এনসিটিবি কাগজের চাহিদা প্রায় ৭০ বা ৮০ হাজার টনের বেশি তার বিপরীতে কর্ণফুলী পেপার মিলস্ থেকে পাঁচ হাজার টনের মতো কাগজ ক্রয় করা হয় তাহলে কেপিএম ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব ।
কেপিএমকে ঘুরে দাঁড়ানোর এবং আধুনিকায়ন করার লক্ষে শিল্প মন্ত্রণালয়,বিসিআইসি, কেপিএম কর্তৃপক্ষ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সরকারের বার্ষিক কাগজের চাহিদার ০৭ভাগ বা ০৮ভাগ কেপিএম হতে সরকার কাগজ ক্রয় করলে কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড এর অনেক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কেপিএম এর উৎপাদিত কাগজের বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই কাগজে চোখের জ্যোতির কোন ছাপ নেই । টেকসই অতিমাত্রায় শুকানো এই কাগজ থেকে লেখা সহজে মুছে যায় না।
কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান জড়িয়ে আছে। গত ২০১৯—২০ অর্থ বছরে আট হাজার টনের মতো কাগজ উৎপাদন করে তার বিপরীতে প্রায় সাত কোটি টাকা মত সরকারকে রাজস্ব প্রদান করা হয় এবং স্বাধীনতা পর থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকার মতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে রাজস্ব প্রদান করে।
কর্ণফুলী পেপার মিলস্ লিমিটেড এ ক্রয়কৃত, লিজকৃত, লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রায় এক লক্ষ সাতাইশ হাজার একর ভূমি রয়েছে। এই কারখানা অচল হলে কাগজের বাজার প্রাইভেট কোম্পানির হাতে চলে যাবে। এতে সরকার হারাবে রাজস্ব আয়। বিদেশি পাল্প ক্রয়ে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাবে। হাজার হাজার মানুষ হবে কর্মহীন। বিলুপ্তি হবে বাঁশশিল্প। বাঁশশিল্প বিলুপ্তি হলে ক্ষতি হবে পরিবেশের এবং কেপিএম এক লক্ষ সাতাইশ হাজার একর ভূমি বেদখলে যাবে। কাগজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হবে।কেপিএমকে বাঁচাতে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে বলে আব্দুর রাজ্জাক তার অভিমত ব্যাক্ত করেন।