নিজস্ব প্রতিনিধি: অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, ডিজএ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন (ডিসিএফ), প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ (এনসিডিডব্লিউ), সীতাকুন্ড ফেডারেশন, টার্নিং পয়েন্ট ফাউন্ডেশন, উইমেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (ডাব্লিউডিডিএফ), ডিজএবিলিটি রাইটস্ ফান্ড এবং দৈনিক সমকাল এর সাথে যৌথভাবে “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে নেতিবাচক দৃস্টিভঙ্গির পরিবর্তন: ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা“ শীর্ষক ৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ২০২১ একটি ভার্চুয়াল সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাকসেস বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা’র সঞ্চালনায় ইসলাম ধর্ম থেকে অধ্যাপক ড. মো: শামছুল আলম, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, খ্রিস্টান ধর্ম থেকে রাইট রেভা. সৌরভ ফলিয়া, ডেপুটি মডারেটর- চার্চ অব বাংলাদেশ, বিশপ-বরিশাল ডায়োসিস, বৌদ্ধ ধর্ম থেকে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও একুশে পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, প্রাক্তন চেয়ারম্যান, পালি এন্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সভাপতি, বিশ্ব বৌদ্ধ ফেডারেশন-বাংলাদেশ চ্যাপ্টার, চেয়ারম্যান-কাউন্সিল ফর ইন্টারফেইথ হারমনি-বাংলাদেশ এবং স্বামী বিভাত্মানন্দ, অধ্যক্ষ ও সম্পাদক, রামকৃষ্ণ মিশন, দিনাজপুর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। যার সারকথা হলো-পবিত্র কুরআনে মানুষকে স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে বলা হয়েছে। স্রষ্টাকে সৃষ্টিকে ভালোবাসলেই স্রষ্টাকে ভালোবাসা হয়।
এদিক থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবজ্ঞা করা, অবহেলা করা বা দোয়ারোপ করা যাবে না। গীতায় আছে (২৯/৯ম) আমি সকল জীবে সমানভাবে বিরাজ করি। আমার প্রিয় বা অপ্রিয় কেউ নেই। কিন্তু যারা ভক্তিপূর্বক আমার ভজনা করে তারা স্বাভাবিকভাবেই আমাতেই অবস্থান করে এবং আমিও তাদের হৃদয়ে বাস করি। বাইবেলে সাধু যোহনের লেখা সুসমাচারের ৯ অধ্যায় ১-৩ পদে লেখা আছে – আর যীশু যাইতে যাইতে একজন লোককে দেখিতে পাইলেন, সে জন্মাবধি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তাঁহার শিষ্যেরা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রব্বি, কে পাপ করিয়াছিল, এই ব্যক্তি, না ইহার পিতামাতা, যাহাতে এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হইয়া জন্মিয়াছে? যীশু উত্তর করিলেন, পাপ এ করিয়াছে, কিম্বা ইহার পিতামাতা করিয়াছে, তাহা নয়; কিন্তু এই ব্যক্তিতে ঈশ^রের কার্য্য যেন প্রকাশিত হয়, তাই এমন হইয়াছে।”বৌদ্ধধর্মে আর্তপীড়িত, দু:স্থ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল মানুষের প্রতি, সকল জীবের প্রতি সমানভাবে মৈত্রীভাব পোষণ করার কথা বলা হয়েছে।
এ আলোচনা থেকে একটি বিষয় খুবই স্পষ্ট যে, কোন ধর্ম গ্রন্থে প্রতিবন্ধিতাকে পাপ হিসেবে দেখা হয়নি। মানুষের প্রকৃত মর্যাদা ও সাফল্য তার দেহের আকৃতির উপর নির্ভর করে না বরং তা নির্ভর করে তার কর্মস্পৃহা, আগ্রহ ও আন্তরিকতার উপর। বাস্তবে আমাদের কাছে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তারা জীবনে নিজেদেরকে সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পেরেছেনে এবং পৃথিবীতে মানব কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছেন এবং রেখে চলেছেন। অথচ আমাদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের মূলধারায় আনতে হলে আমাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে কুসংষ্কার, ভ্রান্তধারণা পরিত্যাগ করতে হবে। সেমিনারে সকলেই এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানানো হয়।
দৈনিক সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি বলেন, ধর্মীয় নেতারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয় নিয়ে সমকাল পত্রিকায় লিখতে পারে। আলবার্ট মোল্লা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকার উপর জোর দেন । তিনি বলেন, মসজিদ, গীর্জা, মন্দির এবং প্যাগোডার ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবস্থান তুলে ধরতে পারেন, এর মাধ্যমে দেশব্যাপি জনগণকে সচেতন করতে পারেন। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মসজিদ, গীর্জা, মন্দির এবং প্যাগোডা প্রবেশগম্য করতে ধর্মীয় নেতারা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
সেমিনারে আয়োজকদের পক্ষে দৈনিক সমকাল এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি এবং উইমেন উইথ ডিজএ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি স্বাগত বক্তব্য দেন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ৪টি প্রধান ধর্মের প্রতিনিধিবর্গ, বেসরকারি সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থার দেশস্থ প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সুশীল সমাজ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনের ৬৩ জন প্রতিনিধি। প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ এর সভাপতি নাছিমা অক্তার এর ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে সভার পরিসমাপ্তি ঘটে।