নিজস্ব প্রতিবেদক কাপ্তাই ( রাঙামাটি) থেকে : পাকুয়াখালীর গণহত্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের এক ভয়ংকর কালোদিন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার পাকুয়াখালীতে পাহাড়ে কাঠ কাটতে যাওয়া ৩৫ জন নিরীহ বাঙালী কাঠুরিয়াকে নির্মম নির্যাতন আর অত্যাচারের মাধ্যমে হত্যা করেছিল সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন তথাকথিত শান্তিবাহিনীরা ।
পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা শহরের শাপলা চত্বরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল মজিদের সভাপতিত্বে ও ছাত্র নেতা শাহাদাৎ হোসেন কায়সের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব ও বাঘাইছড়ির সাবেক পৌর মেয়র আলমগীর কবির, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পিসিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক ও খাগড়াছড়ি জেলার সিঃ সহ-সভাপতি এস এম মাসুম রানা, খাগড়াছড়ি জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি তাহেরুল ইসলাম সোহাগ, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন সহ- সাধারণ সম্পাদক জালাল প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আলমগীর কবির বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র হচ্ছে, পাহাড়ে খুন, গুম, হত্যা করে রক্তের হোলি খেলায় মেতেছে সন্তু, প্রসিতের নেতৃত্বধীন সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ এর সন্ত্রাসীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সন্তু লারমা, প্রসিত খীসা। এসব সন্ত্রাসীদেরকে গণ জাগরণের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা হবে।
পাবর্ত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস’র সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনীর হাতে অসংখ্য বর্বরোচিত, নারকীয় ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে শিকার হয়েছে পাবর্ত্য অঞ্চলের বাঙালীরা। অসংখ্য ঘটনার মধ্যে আজ পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে একটি নৃশংসতম বর্বর গণহত্যা দিন, পাকুয়াখালী ট্রাজেডি দিবস।
সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএস এর সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী কর্তৃক রাঙামাটি জেলার পাকুয়াখালীতে নিরীহ এবং নিরস্ত্র বাঙালী কাঠুরিয়াদের ওপর নির্মম নির্যাতনের পর হত্যাকাণ্ড চালিয়ে তাদের বীভৎস মানসিকতার এক জঘন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এই দিনটি একটি নৃশংসতম বর্বর গণহত্যা দিন। এই দিনে ৩৫ জন নিরীহ বাঙালী কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল শান্তিবাহিনী। তাদের ক্ষত-বিক্ষত, বিকৃত লাশের নির্মম দৃশ্য দেখে সেদিন শোকে ভারী হয়ে ওঠেছিল পরিবেশ। হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে, দা-দিয়ে কুপিয়ে এবং বন্দুকের বেয়নেট ও অন্যান্য দেশি অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নানাভাবে কষ্ট দিয়ে হত্যা করেছিল সেদিন অসহায় ওই মানুষগুলোকে। প্রতিটি লাশকেই বিকৃত করে সেদিন চরম অমানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শান্তিবাহিনী।
নেতৃবৃন্দরা বলেন মানবাধিকার এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে পার্বত্যঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই পাকুয়াখালী গণহত্যাসহ পাহাড়ে সকল বাঙালী গণহত্যাকাণ্ডের তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন। অন্যথায় পাবর্ত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা কোনোদিনই সফল হবে না। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ও সম্প্রীতি রক্ষায় সশস্ত্র অবৈধ অস্ত্রধারী ও দেশদ্রোহী সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যার দায়ে খুনি সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাসহ তাদের সংগঠনের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার জোর দবী জানান।