মাহফুজ আলম, কাপ্তাই ( রাঙামাটি) থেকে : কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদে মাত্রাতিরিক্ত কচুরিপানার ভয়াবহ জট সৃষ্টি হওয়ায় হ্রদ পথে ইঞ্জিন চালিত বোট. নৌকা ও স্ট্রিমার চলাচল প্রতিদিন বিঘ্ন ঘটছে ফলে হ্রদে যাতায়াত নির্ভর ৬ উপজেলার যোগাযোগ ব্যাবস্হা প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর বর্ষায় কমবেশি কচুরিপানার সমস্যা থাকলেও এ বছর বর্ষায় মেজুরাম, মারিশ্যা, ছোট হরিনা, বড়হরিনাসহ দুর্গম বিভিন্ন পাহাড়ী ঢলের সাথে বিভিন্ন আবর্জনা ও কচুরিপানা কাপ্তাই হ্রদে ভেঁসে এসে পানি পথে জট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সৃষ্ট এ সমস্যার কারণে ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা বনিজ্য. যাতায়াত. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি অফিস – আদালতের সকল কার্যক্রম। অনুসন্ধানে জানা যায় জেলেদের হ্রদে জাল ফেলতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আবার কচুরিপানা ভেসে ঘাটে চলে আসায় ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা তীরে ভিড়তে বেগ পেতে হচ্ছে। তর্থ্যে জানা গেছে, তদারকি ও পরিকল্পনা না থাকায় প্রায় এক যুগ হতে হ্রদে কচুরিপানা দিন দিন বাড়ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কাপ্তাই ব্যবস্হাপক আব্দুজ্জাহের জানান সম্প্রতি সময়ে কচুরিপানায় কাপ্তাই হ্রদ এলাকার জেটিঘাট ও স্পর্শকাতর পিডিবি’র পাওয়ার ষ্টেশন এলাকার ইনটেকসহ কয়েক কিলোমিটার পানি পথ জুড়ে কচুরিপানার জটে সকল কার্যক্রমে বিঘ্নিত হচ্ছিল যার কারনে ১৬ সেপ্টেম্বর পিডিবি স্পীলওয়ের ৪টি খুলে দিয়ে পানির সাথে কচুরিপানার বিশাল একটি অংশ অপসারণ করা হয়েছে।যার ফলে ব্যবসা বানিজ্য নৌকা ও ইঞ্জিন বোট যাতায়াতে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে রবকল.নানিয়ার চর.লংগদু.বাঘাই ছড়ি.বিলাইছড়ি. জুরাছড়ি এ ৬ উপজেলার আসপাশের কচুরিপানার জট গুলো এখনো কোন ভাবে সংস্কার না হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে।ফলে জনদুর্ভোগ রয়ে গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কচুরিপানা দ্রুত বর্ধনশীল উদ্ভিদ। দিনে এটি প্রায় দ্বিগুণহারে বাড়ে। কাপ্তাই হ্রদে ক্রিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বৃদ্ধি পাওয়ার পর ও ঘোনায় মাছ চাষের ফলে কচুরিপানা বেড়ে চলছে। পাশাপাশি ভারতের মিজোরাম থেকে উজানে কচুরিপানা চলে আসায় হ্রদের সঙ্গে মিশে গিয়ে বিশাল স্তূপাকারে কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
হ্রদে কচুরিপানা পরিষ্কারে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক নয়ন শীল বলেন, আগে এ সমস্যা বেশি না হলেও এবার সমস্যা তীব্র হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঢাকায় চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানিয়েছি। এরই মধ্যে নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে স্থানীয় লঞ্চ মালিক সমিতির মাধ্যমে কিছুটা পরিষ্কার করা সম্ভব হলেও পুরোপুরি এখনও পরিষ্কার করা যায়নি।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখা। আমরা সেটার চেষ্টা করছি, তবে হ্রদ কচুরিপানা মুক্ত রাখতে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষার পানিতে হ্রদে পানি না বাড়লেও মিজোরাম থেকে পানি আসায় হ্রদের পানি বেড়েছে। হয়তো সেদিক থেকে কিছু কচুরিপানা এসেছে। তবে আমরা লঞ্চ মালিক সমিতির সহযোগিতায় সুবলং চ্যানেলে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তা সরিয়ে ফেলেছি। তিনি বলেন, নির্দিষ্টভাবে হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের দায়িত্ব এককভাবে কারো না থাকলেও যেখানে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে আমরা সেখানে সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বিডি২৪ভিউজ কে বলেন, হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের দায়িত্ব কোন-কোন বিভাগের, এ বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে কচুরিপানা থেকে সৃষ্ট দুর্ভোগ থেকে জনসাধারণকে মুক্ত করতে যেখানে যে সমস্যা দেখছি আপাতত সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা আমরা অব্যাহত রেখেছি। এছাড়া স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কচুরিপানা পরিষ্কারের দায়িত্ব থাকলেও এতো বড় হ্রদের কচুরিপানা পরিষ্কারের মতো অতো সামর্থ্য তাদের নেই।তিনি আরও বলেন, স্থায়ীভাবে হ্রদ থেকে কচুরিপানা মুক্ত করার জন্য সুদৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহন ও গবেষণার প্রয়োজন। গবেষণা থেকে যে তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে সেটা সামনে রেখে হ্রদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এটির সমাধান সম্ভব। অনুসন্ধানে জানা গেছে হ্রদ ব্যবহার করে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান রাজস্ব আয় করলেও কচুরিপানা পরিষ্কার করতে এককভাবে দায়িত্ব নিতে রাজি হচ্ছে না কেউ।বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক নয়ন শীল বলেন, আগে এ সমস্যা বেশি না হলেও এবার সমস্যা তীব্র হয়েছে। আমরা বিষয়টি ঢাকায় চেয়ারম্যান স্যারকে জানিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নৌ চলাচল স্বাভাবিক রাখা। আমরা সেটার চেষ্টা করছি, তবে হ্রদের কচুরিপানা অপসারণ করতে সমন্বিত উদ্যোগের বিকল্প নেই।