আল এনায়েত করিম রনি, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে এক বিধবা নারীকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই নারী থানায় অভিযোগ করেছেন। এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে বিধবা নারীর হাত পা ধরিয়ে ঘটনার মিমাংসা করেছেন গ্রাম্য মাতব্বরা। ঘটনাটি ঘটেছে, কাশিয়াগাড়ি এলাকায়। ভূক্তভোগী নারীর অভিযোগ ও তার পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের কাশিয়াগাড়ি গ্রামের বাদশা মিয়ার ছেলে লতিফুল খবির বাবু (৪০) সম্পর্কে ওই নারীর ভাতিজা। বাবু প্রায় সময় ওই নারীকে উত্যাক্তসহ তার বাড়ির আশেপাশে ঘোরাফেরা করত। গত ৩০ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বাবু ওই বিধবা নারীর শয়ন ঘরের দড়জা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। এ সময় ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা ওই নারীকে ধর্ষনের চেষ্টা করেন বাবু। এতে নিজের আত্মসম্মান বাঁচাতে চিৎকার শুরু করলে বাবু তার মুখ চেপে ধরলে ওই নারীর মুখ ও নাকের বিভিন্ন স্থানে জখম হয়। এ সময় প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে বাবুকে আটকের চেষ্টা করলে সে পালিয়ে যায়। এরপর ঘটনার প্রতিকার চেয়ে গত ৩ অক্টোবর ভিকটিম উলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
নির্যাতিত বিধবা নারী জানান, থানায় অভিযোগ দেয়ার পর গত ৪ অক্টোবর ধামশ্রেনী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা এস আই হুমায়ুন কবীর তদন্তে যান। এ সময় তিনিসহ (ভিকটিম) আশেপাশের লোকজনের কাছে ঘটনার বিস্তারিত শুনেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরে বাবুর পরিবারের লোকজন স্থানীয় মাতব্বরদের মাধ্যমে বিষয়টি আপোষ মিমাংসার চেষ্টা চালান। এরই প্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর রাতে ডা. রফিকুল ইসলামের বাড়ি সংলগ্ন কাশিয়াগাড়ি ক্লাবের সামনে আপোষ মিমাংসার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাতব্বরদের কথা অনুযায়ী লতিফুল খবির বাবুকে দিয়ে ওই বিধবা নারীর হাত পা ধরিয়ে ঘটনার মিমাংসা করা হয়। এ সময় ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা আর ঘটবে না মর্মে ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে বাবু ও বাবুর পিতার স্বাক্ষর নেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, মনে দুঃখ থাকলেও মাতব্বরদের কথা বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই তিনি নিরুপায় হয়ে সব কিছু মেনে নিয়েছেন।
ওই নারীর ছেলে জানান, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান, ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারন সম্পাদক ও থানার এস.আই হুমায়ুন কবিরসহ স্থানীয় মাতব্বরা। ওই ওয়ার্ডের আওয়ামীলীগের সভাপতি ডা. রফিকুল ইসলাম বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সকলের উপস্থিতিতে ওই নারীর হাত পা ধরিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে দেয়া হয়েছে। ধর্ষন চেষ্টারমত গুরুত্বর অভিযোগের বিষয়টি এভাবে বৈঠক করে মিমাংসা করে দেয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। ধামশ্রেনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান সরদার জানান, উভয় পক্ষের সম্মতিতে বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে। ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগটি আলোচনায় আসেনি। তবে ওই নারীর ঘরে তিনি প্রবেশ করেছিলেন তা স্বীকার করেছেন। মামলা মোকদ্দমার চেয়ে কি মিমাংসা ভাল কাজ না। ওই ছেলের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ, এ কারনে শেষ বারের মত তাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উলিপুর থানার এস.আই হুমায়ুন কবির বৈঠকের শুরুতে উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি মিমাংসা করেছেন। তদন্তে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ছেলে পূর্বে ওই নারীর ঘরে প্রবেশের কথা স্বীকার করে, কিন্তু এবার প্রবেশ করেননি বলে জানান। তিনি আরও বলেন, বৈঠকের শেষ পর্যন্ত আমি ছিলাম না। শুনেছি বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে।