পাবনা প্রতিনিধি : মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার লক্ষ্মীপুরের হিন্দুপাড়ায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর আর আলশামসরা। ২৮ জন মুক্তিকামী জনতাকে সাড়িবদ্ধ ভাবে দাঁড় করিয়ে হত্যা করা হয়। যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে ২৬ জনই ছিলেন হিন্দুধর্মাবলম্বী। সেদিনে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান ভবানী শিল ও আদুলী নাপিত নামের দু’জনে। একই দিনে পাশ্ববর্তী শ্রীপুরে অতিসজ্জন লোককবি এমএ গফুরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর করা হলেও আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মি যাহিদ সুবহান জানান, ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট দিনটি ছিলো শুক্রবার। সময় ছিলো ভরা বর্ষাকাল। জুমআর নামজের প্রস্তুতি চলছিলো সর্বত্র। স্থানীয় মুসলমানগণ জুমআর নামাজের জন্য অনেকেই মসজিদে চলে গেছেন। কেউ কেউ যাচ্ছেন। এমন সময় চারিদিকে চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়। পাকিস্তানী সেনারা অতর্কিত গ্রামে হামলা করে। পাকিস্তানী সেনারা আতাইকুলা সড়াডাঙি মাদ্রাসার মাওলানা নবাব আলীকে সাথে নিয়ে নৌকাযোগে পাবনা থেকে লক্ষীপুরের হিন্দুপাড়ায় আসে। বাড়ি বাড়ি তল্লাশী করে ২৬ জন হিন্দু এবং ৩ জন মুসলমানকে বেধে কালিমন্দিরের সামনে এনে লাইনে দাঁড় করানো হয়। ২৯ জনকে এক সাথে গুলি করা হয়। ২৮ জন ঘটনাস্থলেই শাহাদত বরণ করেন। অপরদিকে ভবানী শীল ও আদুলী নাপিত আহত হয়ে পরবর্তীতে মারা যান। পাকিস্তানীরা হিন্দুপাড়ায় আক্রমন করে গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে যায়। পাকিস্তানীরা চলে যাওয়ার পর তৎকালীন চেয়ারম্যান ডাঃ সিরাজুল ইসলাম এলাকার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে কালীবাড়ীর সামনেই ২৬ জনকে মাটি চাপা দিয়ে সমাহিত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাকিস্তানী সেনারা হিন্দুপাড়ার হত্যাযজ্ঞ শেষ করে পাশের শ্রীপুর গ্রামে লোককবি এম এ গফুর কে হত্যা করে। শ্রীপুর বাজারের পাশে এম এ গফুর তখন চেয়ারে বসে ছিলেন। এমন সময় তাকে ধরে শ্রীপুর বাজারে এনে ব্যয়নেট চার্জ করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। লোককবি এম এ গফুর এই অঞ্চলের অনেক পরিচিত এবং সর্বজন শ্রেদ্ধেয় একজন মানুষ ছিলেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই কালীবাড়িতে যাদের মারা হয়েছিলো তাদের বউ, পরিবার পরিজনেরা এখনো অনেকেই জীবিত আছেন। অথচ তাদের খোঁজ কেউ নেয়না। আটঘরিয়া উপজেলা তথা পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে লক্ষীপুরের হিন্দুপাড়ায় হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর নির্মম অত্যাচার ও গণহত্যার ইতিহাস একটি বিশেষ ঘটনা। স্বাধীনতার প্রায় ৪ যুগ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও এখানে এই গণহত্যার স্থানটিকে চিহিৃতকরণ বা গণকবরটিকে বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করে এখানে অন্তত একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিষয়টি এখন সময়ের দাবী। আগামি প্রজন্মের জন্য এখানকার ইতিহাস সঠিক ভাবে সংরক্ষণের লক্ষে স্মৃতিসৌর্ধ নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।