স্টাফ রিপোটার : পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর চারমাথা মোড় ও আশপাশে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। হাত বাড়ালেই মদ, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানা মাদক দ্রব্য মিলছে। স্থানীয় একটি ক্লাবের ব্যানারে মাদক নির্মূলে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা সহ বিএনপির কতিপয় প্রভাবশালী মাদক ব্যাবসীর চাপে এবং পুলিশ প্রশাসনের অদৃশ্য নিষেধাজ্ঞায় এগুতে পারেনি এই কার্যক্রম বলে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপকালে তারা জানান।
এদিকে কাশিনাথপুর মোড়ে মাদকের থাবার পাশাপাশি এলকে রিয়েল এস্টেট কলোনীতে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগ ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকের মরণ ছোঁবলের পাশাপাশি অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে যুব ও তরুণ সমাজ বিপথে পা বাড়িয়েছে। এ এলাকাতে জনৈক ব্যবসায়ীর মদের লাইসেন্স স্থগিত থাকলেও ভিন্ন উপায়ে অন্য উপজেলা ও জেলা থেকে মদ আমদানী করা হচ্ছে। সেটি অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়াও বিক্রি হচ্ছে দেদাচ্র্ছে।
তারা আরও বলেন, এলকে রিয়েল এস্টেট কলোনীতে অধিকাংশ বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক পুরুষেরা বিদেশে থাকেন। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও সন্ত্রাসী এবং মাদক কারবারীরা ওই কলোনীর নারীদের জোরপূর্বক ও ব্লাকমেইল করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করছে। এছাড়াও বাসা ভাড়া নিয়ে বাইরে থেকে অল্প বয়সী কিশোরদের এনে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করছে ।
নগরবাড়ি ঘাটের লাইসেন্সধারী মদ ব্যবসায়ী উপেন্দ্রনাথের পরিবার থেকে জানা যায়, প্রায় ১১ বছর ধরে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করে রেখেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তাদের আরেকটি লাইসেন্স দিয়ে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় অষ্টমনিশায় মদের ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। নগরবাড়ি ঘাটের নামে লাইসেন্সে কোন মদ উত্তোলন করা হয় না।
নগরবাড়ি ঘাটে একাধিক মানুষের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, মাদকের সব রকম দ্রব্য চিহ্নিত ব্যক্তিরা বিক্রি করছেন। মাদকের অভয়ারণ্য হলেও অজ্ঞাত কারনে তারা ব্যবসা চালিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়ার মতো নয়।
কাশিনাথপুর মোড়ের বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা মাদক নিয়ে বড়ই চিন্তিত। এটা থেকে তারা মুক্তি চান। প্রভাবশালী নেতা, মাস্তান, জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয় প্রশ্রয় আর পুলিশ প্রশাসনের দূর্বলতার কারনে প্রতিহত করা বেশ দুস্কর হয়ে পড়েছে।
কাশিনাপুরের মাদক বিরোধী একটি সংগঠনের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মাদক নির্মূলে কিছু সমাজ সচেতন মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। মাদক গ্রহণকারী ও বিক্রেতাদের প্রতিহত করতে কয়েকটি কাজ করেছিলাম। কিম্তু রাজনৈতিক নগ্ন হস্তক্ষেপ আর প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে আর এগুতে পারিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক শিক্ষক জানান, মাদকের থাবায় অতিষ্ঠ আমরা। কিশোর-তরুনরা দিন দিন ঝুঁকছে মাদকের ভয়াবহতার দিকে। সেই সাথে এলকে রিয়েল এস্টেট কলোনীতে অসামাজিক কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরী হয়ে পড়েছে।
আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা প্রমাণ পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, মাদকের পক্ষে পুলিশ নয়, মাদক নির্মূলে এবং মাদককারবারীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসাই পুলিশের অন্যতম কাজ।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল হক বাবু বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে এটা কখনো মেনে নিতে পারিনা। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্ছার। এটা প্রতিহত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এটি আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবির বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদক নির্মূলে দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেই আমরা মাদক নির্মূলে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে কাজ করছি। মাদক কারবারী, মাদক গ্রহণকারী, মাদকের আস্তানা ধ্বংসে আমরা জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী। তিনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে কঠোর ভাবে মাদক দমনে অভিযান পরিচালনার জন্য আহবান জানান।
স্থানীয় মানুষের প্রত্যাশা, যুব ও তরুণ সমাজ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় মাদক ও দেহ ব্যবসায়ীদের পক্ষ না নিয়ে তাদের প্রতিহত করতে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর পাবনাস্থ ইন্সপেক্টর শাহজালাল বলেন, কাশিনাথপুর ও নগরবাড়ীতে মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য নেই। মদ পানের জন্য অনুমতিপ্রাপ্তদের কারণে আমরা গণহারে অভিযান চালাতে পারিনা। আর নগরবাড়িতে যার নামে লাইসেন্স ছিল, সেটি ১১ বছর ধরে স্থগিত আছে। যদিও কোন মাদক দ্রব্য প্রবেশ করে। সেটা আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অন্য জায়গা থেকে আসে। তারপরও আমরা খুব দ্রুত মাদক বিরোধী অভিযান চালাবো ।