পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালি আইনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী মাওলানা নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১০টি অভিযোগের বর্ণনা উল্লেখ করে ঢাকার ওয়াকফ প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার চান এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার সেই অভিযোগের তদন্ত করতে এসেছিলেন ওয়াকফ এস্টেটের এক কর্মকর্তা। কিন্তু স্থানীয়দের হট্টগোলে পন্ড হয়ে যায় তদন্তকাজ। পরে তদন্ত শেষ না করেই ফিরে যান তদন্ত কর্মকর্তা।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে জমিদাতাগণ এলাকার মানুষের ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব বিবেচনা করে কিছু জমি ওয়াকফ করে কাটাখালী হাটের উত্তর সীমানায় কাটাখালী আইনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যা বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের অন্তর্ভূক্ত করেন। যার ইসি নং-১৫৯৯০। চাটমোহর সোনালী ব্যাংকে সঞ্চয়ী হিসাব নং ৭৬৩৭/৩৬। প্রতিষ্ঠানটি পূর্ববর্তী মোতাওয়াল্লী মাওলানা নুরুল আমিন কর্তৃক সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়ে আসলেও বর্তমান মোতাওয়াল্লী ও মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নাসির উদ্দিনের ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আইন শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে।
এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে দশটি অভিযোগের কথা উল্লেখ করে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন। অভিযোগগুলো হলো-ওয়াকফকৃত সম্পত্তির মধ্যে স্থায়ীভাবে পজিশন দিয়ে ছাপানো রশিদ ও হ্যান্ড ¯িøপের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা নিয়ে মোতাওয়াল্লী কাঁচা-পাকা ঘর করে দিয়েছে। মোতাওয়াল্লী-সুপার নিজে অল্প টাকার পজিশন নিয়ে পরে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে পকেটস্থ করেছেন।
সুপারের চাচাতো ভাই সহকারি শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হামিদ একইভাবে সামান্য টাকায় পজিশন নিয়ে লক্ষাধিক টাকায় বিক্রি করে পকেটে তুলেছে। মোতাওয়াল্লীর দেখাদেখি অনেক লোক অল্প টাকায় পজিশন নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে পকেটে তুলেছে। ২০১৩ সালে ওয়াকফ সম্পত্তির মাঝে অবস্থিত আম, জাম, কাঁঠাল, মেহগনি, সুপারিসহ অন্যান্য গাছ বিক্রি করে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার মতো আত্মসাত করেছেন সুপার নাসির উদ্দিন। ওয়াকফ হাট ও অন্যান্য আয় থেকে মোতাওয়াল্লী প্রতিবছর ১৫% হারে বেতন হিসেবে গ্রহণ করেন। যা নিয়মের পরিপন্থি।
বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের তিন বছর মেয়াদী অনুমোদিত কমিটির রেজুলেশন দ্বারা ওয়াকফ হাটের কার্যাদি পরিচালিত হতো। কিন্তু ২০০৪ সালের ২৯ অক্টোবর কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে অদ্যবদি কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া মোতাওয়াল্লী নাসির উদ্দিন নিজের মনগড়াভাবে পরিচালনা করছেন। মোতাওয়াল্লী তার সহোদর ভাই ডা. রিয়াজ উদ্দিনকে একইভাবে দোকানঘরের পজিশন দিয়ে ওয়াকফকৃত জমি সুকৌশলে খরিদ করিয়ে আদালতে মামলা করিয়েছেন। যার নং ২৮৯/০৯। মোতাওয়াল্লীর এমন কার্যকলাপে স্থানীয় জনগণ জোরপূর্বক ওয়াকফ হাটের যত্রতত্র এলোপাথারীভাবে কাঁচা পাকা ঘর উঠিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। এতে হাটের চলাচলের গলি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকা হাটের ডাক হয়। সেই টাকার কোনো হিসেব নেই।
এ সকল অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরের আগে তদন্তে আসেন ওয়াকফ এস্টেট পাবনার পরিদর্শক হাফিজুল ইসলাম। তিনি উভয়পক্ষের কথা শোনেন। এলাকাবাসী মোতাওয়াল্লী ও মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন। জমিদাতা পরিবারের সদস্যরা বলেন, মোতাওয়াল্লী তাদের কাউকে কমিটিতে না রেখে, কোনো কিছু না জানিয়ে একাই সব কাজ করে যাচ্ছেন। ওয়াকফ সম্পত্তি বিপুল পরিমাণ আয়ের অর্থের কোনো হিসেব নেই। র্দীঘদিন ধরেই তার এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করেও সুরাহা মেলেনি। তদন্তে উভয়পক্ষের শুনানীর এক পর্যায়ে শুরু হয় হট্টগোল। পরে তদন্ত শেষ না করেই চলে যান ওই কর্মকর্তা।
যাবার আগে তিনি উপস্থিত এলাকাবাসীকে বলেন, ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কমিটি গঠন বা পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। আবার ওয়াকফ প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর করারও সুযোগ নেই। তাই কেউ যদি করে তাকে, কিংবা ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে আয়ের অর্থ আত্মসাত করে থাকে তাহলে তিনি ছাড় পাবেন না। আর ওয়াকফ কমিটি গঠনে অবশ্যই জমিদাতার পরিবারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে তাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে পরিচালনা করতে হবে।
মোতাওয়াল্লী ও মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নাসির উদ্দিন তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলেন, তিনি যা করেছেন ন্যায় সংগতভাবে করেছেন। তার সব কাজের রেজুলেশন, তথ্য, প্রমাণ সব রয়েছে। তিনি নিয়মের বাইরে কোনো কাজ করেননি। স্থানীয়রা যেসব অভিযোগ তুলেছে তার পক্ষে কোনো দলিল বা প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। এলাকার কিছু উচ্ছৃংখল মানুষ বারবার তাকে হেনস্তা ও অসম্মানিত করা অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তারা যেন আগামীতের এটা আর না করে। এর আগেও তদন্ত হয়েছে। তখনও তারা হট্টগোল করে তদন্ত বানচাল করেছিল।