নিজস্ব প্রতিনিধি : সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য, সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ভাষাসৈনিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা ও বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ শামসুর রহমান শরীফ ডিলু’র রেখে যাওয়া উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডসহ অসমাপ্ত সকল কাজ সমাপ্ত করতে চান তারই পুত্র, যুক্তরাজ্য থেকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত গালিবুর রহমান শরীফ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে গালিবুর রহমান শরীফকে দলীয় মনোনয়ন দেন তাহলে তিনি আশাবাদী নির্বাচনী এলাকার মানুষ এ অঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তাকে ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন।
৫ বারের নির্বাচিত এমপি প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর পুত্র গালিবুর রহমান শরীফ বিডি২৪ভিউজ কে বলেন, ডাবল ডিজিটের কেপিআই জোন খ্যাত পাবনা জেলার অন্যতম একটি আসন ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া। দেশ স্বাধীনের পর তাঁর বাবা আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রী হয়ে তাঁর নির্বাচনী এলাকাকে যে পর্যায়ে নিয়ে এসেছিলেন, তিনি যদি আর কিছু সময় পেতেন তাহলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, শিল্প ও কৃষি বিপ্লব এবং জীবনমানের আরও পরিবর্তন নিশ্চিত করতেন। তাঁর অসমাপ্ত এই কাজগুলোর পাশাপাশি এই নির্বাচনী এলাকাকে আরও আধুনিক, যুগোপযোগী, উন্নয়নমুখি, কর্মসংস্থানসহ আধুনিক বিপ্লব ঘটাতে চান গালিবুর রহমান শরীফ।
প্রয়াত বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ শামসুর রহমান শরীফের রাজনৈতিক সহকর্মিসহ অসংখ্য ভক্ত, অনুরাগী-অনুসারীরা মন্তব্য করেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনীতি করা নেতাদের উদাহরণ ছিলেন আমাদের ডিলু ভাই। এ অঞ্চলের মানুষের সার্বিক কল্যাণে জীবনমান উন্নয়নে যে স্বপ্ন তিনি দেখেছেন, তা বাস্তবে রূপ দিতে সকল ধরণের প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন। আমাদের বিশ্বাস তাঁর রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজ তারই সুযোগ্য সন্তান গালিব বাস্তবায়নসহ যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।
গালিবুর রহমান শরীফ বিডি২৪ভিউজ কে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলায় প্রায় শতভাগ পাকারাস্তা, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠা, নানা ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সরকারের সহযোগিতায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর এর সম্ভবের পেছনের কারিগর ছিলেন তাঁরই বাবা শামসুর রহমান শরীফ। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে তাঁর বাবার সহযোগিতায়, উদ্যোগে, অনুপ্রেরণায় কৃষি ও শিল্প বিপ্লব হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জরুরী।
তিনি বিডি২৪ভিউজ কে বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ চলমান ‘রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প’, ঈশ্বরদী ইপিজেড, বিমানবন্দর, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সদর দপ্তর, সরকারের বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান দপ্তরসহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সৌন্দর্যবর্ধন, প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নদী বেষ্ঠিত দর্শণার্থী ভরপুর জোড়া সেতু। অর্থাৎ ঐতিহ্যবহণকারী পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আর লালনশাহ সেতু।
গালিব বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আর জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করলে, বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্তসহ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু, সরকারি কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালু, ঈশ্বরদী শহরকে আধুনিকায়নে ঢেলে সাজানো, ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ, নির্বাচনী এলাকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড গতিশীল করা, আধুৃনিক মানের স্টেডিয়াম ও অডিটোরিয়াম নির্মাণ, সংস্কৃতি চর্চা প্রসারসহ মানুষের কল্যাণে আধুনিক, যুগোপযোগী ও টেকসই উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
গালিবুর আরও বলেন, বিএনপি-জামাতের কারণে ঈশ্বরদী ছিল অস্থির, সন্ত্রাস, মাদক ও চাঁদাবাজির অভয়ারণ্য। প্রকাশ্য মানুষ খুন, অপহরণ, ছিনতাইসহ নানা আইনপরিপন্থি কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন কিন্তু নিশ্চুপ থাকেনি। বিএনপি-জামাতের এ সকল অপকর্ম শক্তভাবে প্রতিহত করতে মাঠে ছিল। আর এর নেতৃত্ব দিয়েছেন তার বাবাসহ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা।
গালিবুর রহমান শরীফ দাবী করেন, বাবার গৌরব, পরিবারের ঐতিহ্য আর আওয়ামী লীগের সুনাম বজায় রাখতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স থাকবে তার পক্ষ থেকে। এগুলো দমাতে, প্রতিহত করতে এবং নির্মূলে যে কোন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণে তিনি কার্পূন্যতা করবেন না। এ সকল কর্মকান্ডে যদি দলীয় লোকজনও জড়িত থাকে, তারাও ছাড় পাবে না।
গালিবুর বলেন, আমার বাবা শামসুর রহমান শরীফ মারা যাবার পর আমরা তথা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অভিভাবক শুন্য হয়ে পড়েছি। তিনি পুরো জেলার আওয়ামীলীগ পরিবারের কাছে ছিলেন আস্থার কান্ডারী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি পাবনা জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন দক্ষতা, বিচক্ষণতা আর আন্তরিকতার সাথে। আমার বাবার শুন্যতা দূর করতে, স্থানীয় ভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ ও বিভেদ শুন্য করে গতিশীল এবং চাঙ্গা করতে হবে। বাবার মৃত্যুর পর সাংগঠনিক কর্মকান্ড মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে থমকে গেলেও ব্যক্তিপর্যায়ে নেতাকর্মিদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। গালিবুর বলেন, বাবা নেই, কিন্তু বাবার শুন্যতা দুর করতে নেতাকর্মিদের সাথে সব সময় যোগাযোগ স্থাপন অব্যাহত রেখেছি।
ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া এলাকার বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, ডিলু ভাই ছিল আমাদের ছায়া। বিপদে আপদে আমরা তার কাছে যেতাম, পরামর্শ, সহযোগিতা, সহায়তা এক কথায় তিনি ছিলেন বটবৃক্ষ। আমাদের বিশ্বাস তাকে অনুসরণ করেই আগামি নেতৃত্ব দেওয়ার সেই দীক্ষা ডিলু ভাই দিয়ে গেছেন তার সুযোগ্য সন্তান গালিবুর রহমান শরীফের মধ্যে। আমরা ডিলু ভাইয়ের শুন্যতা পূরণে আসন্ন উপনির্বাচনে তাঁরই পুত্র গালিবুরকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই।
গালিবুর রহমান শরীফ বিডি২৪ভিউজ কে বলেন, দলের নীতিনির্ধারক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যেটা ভালো মনে করবেন। যাকে দিয়ে তাঁর সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে পারবেন, তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। তিনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে তাঁকে এই আসন উপহার দেবেন। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই। আমরা বিভেদ ভুলে, প্ররোচনায় না এগিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করতে চাই।
শিক্ষাজীবন : প্রাথমিকে পড়াবস্থায় সে সময়ে পরিস্থিতি আমাকে ঢাকা চলে যেতে বাধ্য করে। ঢাকাতে গিয়ে ভর্তি হই ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে। তারপর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয়ে হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা করি। ২০০৮ সালে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে গমন করি। সেখানে ভর্তি হওয়ার আগে এক্সসেস সার্টিফিকেট এক্সাম দিয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হই। এপ্লাইড অ্যাকাউন্টে আমি ২০১৩ সালে গ্রাজ্যুয়েশন সম্পন্ন করি। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিষয়ে পোষ্ট গ্রাজ্যুয়েশন সম্পন্ন করি।
কর্মজীবন : একদিকে শিক্ষার্থী আর অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সার্ভিস দেয়া ছিল গালিবুর রহমানের কর্মজীবন। পড়ালেখা শেষ করার পর সেখানেই একটি আন্তর্জাতিক মানের চার্টাড অ্যাকাউন্টিং ফার্মে বিজনেস ম্যানেজার হিসেবে তিনি যোগদান করেন। অ্যাসোসিয়েশন অব সার্টিফাইড চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টে এনরোলডমেন্ট হন। অফিসিয়ালি কাজের পাশাপাশি তিনি চার্টার্ড কোয়ালিফিকেশন পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করে ৯ টি মডিউল কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। আন্তর্জাতিক মানের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেছেন। এছাড়াও তিনি তৃণমূল রাজনৈতিক পরিবার থেকে বেড়ে উঠার কারণে দল থেকে দুরে অবস্থান করতে পারেননি। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে তিনি সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনগুলোর সকল কর্মসূচীতে সরাসরি সম্পৃক্ত থেকেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র দৌহিত্র সেখানে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে ওই নির্বাচনেও তিনি প্রচার প্রচারণার দাায়িত্বে ছিলেন। তিনি ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য। বাল্যকাল থেকেই তিনি স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বাবা মারা যাবার পর তিনি এখন নিজ বাডীতে অবস্থান করছেন এবং সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন।
কর্মকান্ড : দলীয় নেতাকর্মিদের সাথে যোগাযোগ ছাড়াাও আপদে বিপদে পাশে দাঁডানো। মহাপ্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে নির্বাচনী এলাকার বিশেষ করে পাবনা-৪ এর ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলার হতদরিদ্র, কর্মহীন, অসহায়, দুস্থ মানুষের পাশে দলীয় নেতাকর্মিদের সহযোগিতায় পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি পরিবার ও ব্যক্তি উদ্যোগে ২৫ হাজার মানুষের মধ্যে নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্যর মধ্যেই চেষ্টা করছি এই সহায়তা অব্যাহত রাখতে।