রিমন পালিত: বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানে রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের এক মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ উঠলেও ১২ দিনেও মিলেনি কোনো সন্ধান । সে ৭ নং ওয়ার্ড আর্মি পাড়ার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম (৪৯) এর মেয়ে নাবিলা ইসলাম শিমুল (১৫) । অপহরণের দীর্ঘ ১২ দিন পরও মেয়ের কোন সন্ধান না পাওয়াতে মা-বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে মানুষের মুখে মুখে এই কথা ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকদের নজরে আসে জিনিসটি । ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য সরোজমিনে মেয়ের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সাথে কথা বললে মেয়ের মা নাসিমা আক্তার (৩৮ )জানাই আর্মি পাড়ার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মকবুল আহাম্মদের বকাটে ছেলে সাজ্জাদ দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাওয়ার পথে তার মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছিল । যার কারণে আমার মেয়ে পড়ালেখার বিঘ্ন ঘটে। যেখানেই যায় আমার মেয়ের পিছনে পিছনে লেগে থাকে কিছু ছেলেপেলে নিয়ে। যার জন্য সব সময় মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতাম আমি ।
গত ১৪ আগস্ট শুক্রবার ১২ টার দিকে আমি আমার ছোট মেয়ে নাবিলাকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় বড় মেয়ের বাসায় যাব বলে। কারণ বড় মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা , তাকে দেখার উদ্দেশ্যে আমি আর আমার মেয়ে বের হয়,,আমরা বাসা থেকে বের হয়ে বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি, হঠাৎ করে আট থেকে দশজন ছেলে কোত্থেকে এসে আমার মেয়েকে আমার হাত থেকে জোর করে টেনে গাড়িতে তুলে ফেলে। আমি চিৎকার চেচামেচি করলে তখন কেউ আসেনি, এছাড়া বৃষ্টির কারণে আশেপাশে দোকান পাট বন্ধ ছিল। আমি নিরুপায় হয়ে দ্রুত বাসায় এসে মেয়ের বাবাকে জিনিসটি জানায়। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত বান্দরবান-কেরানীহাট পর্যন্ত গেলেও মেয়েকে খুঁজে পাইনি পরবর্তীতে তিনি নিরুপায় হয়ে বান্দরবান সদর থানায় একটি মামলা করে। এখনো পর্যন্ত আমরা আমাদের মেয়েকে খুঁজে পাইনি আমরা প্রশাসনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি এবং যারা একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মেয়েকে জোরপূর্বক রাস্তা থেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে তাদের শাস্তি দাবি কামনা করছি।
অপহরণের বিষয়ে মেয়ের বাবা মোঃ শফিকুল ইসলাম (৪৯) এর সাথে কথা বললে তিনি জানান আমি সাধারন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। দীর্ঘ ১২ টা দিন হয়ে গেল আমার মেয়েটাকে অপহরণ করেছে ,এখনো পর্যন্ত সে জীবিত আছে কিনা মরে গেছে আমরা তার কোন খবর পাইনি । সে কোথায় আছে সেটাও জানিনা। তারা পরিকল্পনা মাফিক আমার মেয়েটাকে অপহরণ করেছে। আমার বাসার সামনে বৈদ্যুতিক খাম্বাতে সিসি ক্যামেরা ফিট করেছে ,যার ফলে আমার বাসা থেকে কোন মানুষ বের হলে কখন, কোথায়, কোন সময়ে, যায় সব সিসি ক্যামেরায় উঠে যায়। না হলে আমার স্ত্রী আমার ছোট মেয়েকে নিয়ে যে আমার বড় মেয়ের বাসায় যাবে এবং রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে সে খবর কি করে অপহরণকারীরা পেল। সিসি ক্যামেরা স্থাপনকারী তার পাড়ার জাফর নামে এক লোককে এই অপহরণের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে সন্দেহ করছেন। কারণ সিসি ক্যামেরার সকল ফুটেজ এবং মনিটর জাফরের বাসায়। এলাকার কোন মানুষ কোথায় যাচ্ছে কি করছে সব জাফর তার বাসায় বসে দেখতে পায় সিসি ক্যামেরার মনিটর এর মাধ্যমে। পাড়াবাসী ও অভিযোগ করেছে এই সিসি ক্যামেরা অহেতুক তিনি রাস্তায় লাগিয়ে রেখেছে তাতে এলাকার মা-বোনের অসম্মানী হচ্ছে ।
এই বিষয়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপনকারী জাফরের সাথে কথা বললে তিনি জানান এলাকায় চুরি-ডাকাতি বন্ধ করার জন্য ওসি এবং মেয়রের এর অনুমতি নিয়ে এখানে লাগিয়েছি । অন্যদিকে কিন্তু এলাকাবাসী তার সিসি ক্যামেরার জন্য অসন্তুষ্ট।এলাকাবাসী বলছে তিনি তার স্বার্থ হাসিলের জন্য এটা লাগিয়েছে। কারন সমাজের নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব প্রশাসনের কোনদিনও তার মত একজন সাধার ড্রাইভার নিতে পারে না। অপহরণকারী আসামি সাজ্জাতের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তার মা জানান আমার ছেলে কোথায় আছে জানিনা ,আমরাও তাকে খুজতেছি। এদিকে এই ঘটনায় মেয়ের বাবা শুক্রবার (১৪ আগস্ট) রাতে সাজ্জাদ হোসেনকে প্রধান আসামি করে ২/৩ জনের বিরুদ্ধে অজ্ঞাতনামা থানায় মামলা করেন। অপহরণের বিষয়ে বান্দরবান সদর থানার উপ- পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আব্দুল আজিজ এর সাথে সরাসরি কথা বললে তিনি জানান ,, মামলা সাপেক্ষে আমরা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপহরণ হওয়া মেয়েটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। আশা করছি খুব দ্রুত অপহরণকারীকে গ্রেফতার করে মেয়েটিকে তার পরিবারে মা বাবার কাছে সম্মানের সাথে তুলে দিতে পারব । অপহরণকারী যেখানে লুকিয়ে থাকুক না কেন প্রশাসন তাদেরকে গ্রেফতার করে খুব দ্রুত কঠিন শাস্তি দিবে।