যশোর প্রতিনিধি : অভয়নগর উপজেলা স্ব্যাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরত্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে হাসপালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও রুগীর স্বজনরা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতাল গেট, ডাক্তারের চেম্বার, জরুরী বিভাগের সামনে মোবাইল নিয়ে ওৎ পেতে দাঁড়িয়ে থাকে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি কম্পানির ৩৫ থেকে ৪০ জন প্রতিনিধি। আবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতাল সংলগ্ন বিভিন্ন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে এদের দেখা মেলে। প্রেসক্রিপশন হাতে নিয়ে চেম্বার থেকে বের হলেই রোগী ও রোগীর স্বজনদেরকে ঘিরে ধরেন তারা, রুগী দাঁড়িয়ে রেখে দলবেঁধে প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলেন সবাইমিলে। চেম্বার-জরুরী বিভাগ থেকে হাসপাতাল এলাকা পার হতে একাধীকবার এমন পরিস্থিতে পড়তে হচ্ছে নারী পুরুষসহ চিকিৎসা নিতে আসা রুগীদেরকে। এতে করে চরম বিড়ম্বনা ও বিরক্তির শিকার হচ্ছে তারা।
কেউ কেউ প্রতিবাদ করলেও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা দরিদ্র নারী পুরুষ মনে করছেন এটাই নিয়ম, তাই নিরবে সহ্য করে যায় তারা। কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রধান টার্গেট নারী ও বৃদ্ধরা। যাতে করে প্রতিবাদের মুখে না পড়তে হয়। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অভয়নগর উপজেলা স্ব্যাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ করা যায়। চলিশিয়া থেকে চিকিৎসা নিতে আসা কাশির রোগী রোকেয়া বেগম বলেন, আমি ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হতে না হতেই দুজন ঘিরে ধরে প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের পোষাক আসাক দেখে মনে করেছি হাসপাতালের লোক, তাই কিছু মনে করিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল শিক্ষিকা বলেন, আমার ৩ বছরের বাচ্চাকে ডাক্তার দেখিয়ে জরুরী বিভাগের সামনে ও মেইন গেটের সামনে আসলে মোট ২ বার ঐলোকগুলোর বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি। আমি চাই হাসপাতাল চত্বর থেকে কোম্পানির প্রতিনিধিদের এই দৌরত্ম বন্ধ হোক।
এব্যাপারে কথা হয় অফসোনিন কোম্পানির রণি, সুমন, মশিউর ও ফারুকের সঙ্গে তারা বলেন, কোম্পানির একটা রুলস যে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০টি প্রেসক্রিপশনের ছবি উপরের বসের কাছে পাঠাতে হবে। যেহেতু চাকরীর ৬০ ভাগ নির্ভর করে এই ছবি তোলার উপরে সেহেতু আমরা বাধ্য হই মানুষকে বিরক্ত করতে।
ডাক্তার এবং কোম্পানির মাঝে কোন চুক্তিপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, না এমন কোন বিষয় নেই, আমরা ফিল্ডে কাজ করছি কিনা সেটার প্রমাণ স্বরুপ ছবি তুলতে হয়। এসিআই কোম্পানির নুরুল ইসলাম বলেন, ছবি তোলার উদ্দেশ্য হলো কোম্পানির সার্ভে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক কোম্পানির প্রতিনিধি বলেন, আমরাও চাইনা এভাবে মানুষকে বিরক্ত করে ছবি তুলতে। এটা আমাদেরও ভালো লাগেনা, আমরা চাই এই সিস্টেম বন্ধ হোক। তবে আপনাদের লেখালেখিতে এটা বন্ধ হবে বলে মনে হয়না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অফসোনিন, রেনেটা, এসিআইসহ প্রায় প্রতিটি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাসপাতাল জুড়ে। এব্যাপারে জানতে অভয়নগর উপজেলা স্ব্যাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামানের নাম্বারে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আবাসিক মেডিকেল অফিসার আলিমুর রাজিব বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে বারবার নিষেধ করা হয়েছে। আবারও তাদেরকে ডেকে নিষেধ করবো, এরপরও যদি তারা না শোনে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।