নইমুল ইসলাম সজিব, শ্রীপুর(গাজীপুর) প্রতিনিধি : সরকারি নীতিমালা তোয়াক্কা না করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে, রাস্তার মোড়ে, ফেক্টুরী সামনের চায়ের দোকান গুলোতে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়ান গ্যাসের (এলপিজি) সিলিন্ডার।উপজেলার সর্বত্র রাস্তাঘাট, সড়কের মোড়ে এমনকি কসমেটিক দোকান, জুতার দোকান, ওষুধের দোকান, ফানিচারের দোকান, মুদি দোকান ও কাপড়ের দোকানেও চলছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের জমজমাট ব্যবসা।
পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দোকানের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে উপজেলার দুই শতাধিক দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। কোন প্রকার নীতিমালা না মেনে এভাবে দাহ্য পদার্থ বিক্রিতে প্রশাসনের তদারকি না থাকায় লাইসেন্সবিহীন গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা বেড়েছে।এর ফলে দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ ও এলাকাবাসী।
সরেজমিনে অনুসন্ধানে দেখা যায়, শ্রীপুর উপজেলার পৌরসভা, মাওনা চৌরাস্তা , মাস্টার বাড়ি ,এমসি বাজার, জৈনা বাজার, মাওনা বাজার, নয়নপুর বাজার, ছাতির বাজার, বরমী বাজারসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় সব বাজারে এলপি গ্যাসে সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে।টেংরা বাজার থেকে মাওনা পল্লী বিদুৎ মোড় পর্যন্ত এবং মাওনা চৌরাস্তা দক্ষিন পাশে ইয়াসমিন মিলের আসপাশে বেশ কয়েক চায়ের দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়।শুধু তাই নয় ফুটপাতে ও দোকানের সামনে রোদের মধ্যে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার।
আইন অনুযায়ী জনপদ থেকে ১০০ মিটার দূরে বিক্রয় কেন্দ্র করার নিয়ম থাকলেও শ্রীপুরে সিলিন্ডার গ্যাসের দোকানগুলো বসেছে স্থানীয় জনবহুল বাজার, মসজিদ, স্কুল এবং গ্রামের ভেতরের চা স্টলেসহ মুদি দোকান সঙ্গে। ফলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে লাইসেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়াই চলছে এ ব্যবসা।লাইসেন্স আছে এমন গ্যাস ও দাহ্য পদার্থ ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য বাজারের দোকানে দোকানে সিলিন্ডার সরবারহ করছেন।
শ্রীপুরে সর্বত্র বসুন্ধারা,যমুন,টোটাল, টিকে, সুপার, বিএম, ওমেরা, বিন হাবিব, বেক্সিমকো,পদ্মা ব্রান্ডের গ্যাস সিলিন্ডার। বাজারে নামিদদামী কোম্পানীর গ্যাস সিলিন্ডার যেমন পাওয়া যাচ্চে তেমনি নামসর্বস্ব কোম্পানীর নিম্মমানের গ্যাস সিলিন্ডারও পাওয়া যাচ্ছে।গ্যাস ব্যবহারকারী ও ক্রেতাদের অভিযোগ অধিকাংশ কোম্পানীর গ্যাস সিলিন্ডারে নিদিষ্ট ওজনের চেয়ে অনেক কম পরিমান গ্যাস থাকে।যার ফলে সরকার নির্ধারিত মূল্যেও চেয়ে বেশী মূল্যে ক্রয় করে ব্যবহারকারী ও ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।এছাড়া ব্যবসায়ীরা দোকানের সামনের ফুটপাতে, জনাকীর্ন এলাকায় যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখে বিক্রি করে যাচ্ছেন। এর ফলে যে কোনো মূহুর্তে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে, বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪-এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে বলা হয়েছে লাইসেন্স ব্যতীত কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি গ্যাস মজুদ করা যাবে না। একই বিধিতে ৭১নং ধারায় বলা আছে, আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি রাখতে হবে। এই আইন অমান্য করলে সংশিষ্ট ব্যবসায়ীর দুই বছর ও অনধিক ৫ বছরের জেল, ৫০ হাজার টাকা এবং অনাদায়ে অতিরিক্ত আরও ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।সেই মোতাবেক ১০টি গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই।
আইনের এই ফাঁক ফোকরটিই কাজে লাগাচ্ছেন শ্রীপুরে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে গ্যাস সিলিন্ডার বোতলে মেয়াদ উর্ত্তীর্ণে তারিখ লেখা নেই। বেশ কিছু চা দোকানির সাথে কথা বলে জানা যায়, এলপিজি গ্যাস বিক্রির নিয়মকানুন তাঁরা জানেনা,এমনকি কিভাবে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স করতে হয় তাও তারা জানেননা। বাজারের ডিলারদের প্রলোভনে পড়ে অধিক লাভের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ও বিক্রি করছেন।
স্থানীয়রা বলেন, স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, সিএনজি পাম্পের পাশে সিলিন্ডার গ্যাসের দোকান বসানো হয়েছে। একেক দোকানে ২০/৩০টি করে সিলিন্ডার রাখা হয়। এছাড়া এসব দোকানে অগ্নিনির্বাপক কোন ব্যবস্থাও নেই। ফলে ভয়ানক ঝুঁকির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।
পরিবেশবিদদের মতে, যত্রতত্র অবাধে পেট্রোল ও গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ফলে যে কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণহানীর আশংকা রয়েছে। তাই লাইসেন্সবিহীন সিলিন্ডার বিক্রি ঠেকাতে প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিস্ফোরক জানা যায় যে,বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়া কেউই গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করতে পারে না।ডিলার ও সাব-ডিলারদের অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হয়। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা রয়েছে।
শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার মো.ইফতেফার হোসেন রায়হান চৌধরী বলেন, আমরা বার বার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দোকানে রাখার পরামর্শ দিয়েছি কিন্তু তারা কোন কথা আমলে নিচ্ছেনা। গাজীপুর জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো.নয়ন মিয়া বলেন এই বিষয়ে তাঁর কিছু করার নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, লাইসেন্সবিহীন গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।