ঈশ্বরদী উপজেলা প্রতিনিধি : দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে করোনা কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রান ফিরেছে। সরকারী বিধি মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইতিমধ্যে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সকল বিদ্যালয়গুলোতে সব ধরনের পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক কর্মচারী ও ছাত্রছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত থাকলেও এর কিছুটা ব্যাতিক্রম উপজেলার লক্ষীকুন্ডা ইউনিয়নের চরকুড়ুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের উপস্থিতি অনিয়মিত হলেও বেতন তুলছেন নিয়মিত। মাসে কয়েকদিন উপস্থিত থেকে বেতন তুলছেন পুরো মাসের। করোনার পর হাতে গোনা মাত্র কয়েকদিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলেও অভিযোগ রয়েছে করোনার আগেই থেকেই তিনি অনিয়মিত। তবে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারন নিয়ে সবার মাঝে রয়েছে কৌতুহল। গুঞ্জন রয়েছে ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে মুলত এলাকাবাসী ও সাবেক কমিটির সদস্যদের সাথে দ্বন্দ্ব রয়েছে ঐ প্রধান শিক্ষকের। মুল কমিটি ও এডহক কমিটির মেয়াদ পার হওয়ায় নিজের পছন্দের ব্যাক্তিদের সমন্বয়ে নতুন এডহক কমিটির চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। এ নিয়ে ঐ এলাকায় দুইটি পক্ষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলে তোপের মুখে পড়েন প্রধান শিক্ষক । আর এ কারনেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনিয়মিত হয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
প্রতিবেদকে উদ্দেশ্য করে স্থানীয়রা বলেন, প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয় কেমন চলতে পারে সেটা আপনারাও ভালোই জানেন। ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে চলতে থাকা দ্বন্দে প্রধান শিক্ষক এরকম অনিয়মিত হলে লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের মান ক্ষুন্ন হবে। এ বিষয়ে এর আগে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল, তবে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি বলেও জানান তারা।
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন, স্যার অনেকদিন ধরে অনিয়মিত, মাঝে মাঝে আসেন। এর বেশি কিছু আমার পক্ষে বলা সম্ভব না। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলফাজ উদ্দীন জানান, শহিদুল স্যার অনেকদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনিয়মিত। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার স্যারও অবগত আছেন। তাদের সাথে কথা বললে কারন জানতে পারবেন।
নাম প্রকাশ নাম করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, মুলত ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে আগের কমিটি ও স্থানীয়দের কিছু একটা সমস্যা রয়েছে। শহিদুল স্যারের বাড়ি পাবনা শহরে হওয়ায় তিনি বিদ্যালয়ে আসা কমিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া সম্ভাবত আর ১ বছর পর তিনি অবসরে যাবেন।
এ বিষয়ে জানতে সাম্প্রতি গত নভেম্বর মাসে ৩ দিন চরকুড়ুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় গেলেও প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম কে প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়নি। হাজিরা খাতায়ও তার অনুপস্থিতির চিত্র পাওয়া যায়। তবে মাসের পর মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন তিনি। কয়েকবার মুঠোফোনে ফোন দিয়েও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আকতারের সাথে কথা বললে তিনি প্রধান শিক্ষকের (শহিদুল ইসলাম) বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি তিনি নিয়মিতই বিদ্যালয়ে আসেন। তবে গত মাসে পরীক্ষা চলাকালীন তিনদিন বিদ্যালয়ে প্রতিবেদকের উপস্থিতি ও প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির কথা তুলে ধরতেই সুর পাল্টান এ কর্মকর্তা। স্বীকার করেন শহিদুল ইসলামের অনুপস্থিতির কথা। বলেন, শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় বিদ্যালয়ে আসেন না তিনি, মেডিকেল সার্টিফিকেটও নাকি জমা দিয়েছেন ছুটি কাটাতে। এসময় প্রতিবেদক তথ্য নিয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর নোটিশ পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম মোসলেম উদ্দীন জানান, মৌখিকভাবে বিষয়টি শুনেছি তবে এখনো এ বিষয়ে লিখিত কোনো অভিযোগ বা নোটিশ পায় নি। তদন্ত সাপেক্ষ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত কোমলমতী শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রধান শিক্ষক অনেকদিন ধরে বিদ্যালয়ে ঠিকমতো আসেন না। স্যারকে আমরা তো স্কুলে দেখিনা। তবে স্যার কিছুদিন পর পর স্কুলে আসে কিছুক্ষন থেকে আবার চলে যায়। এতে বিদ্যালয় পরিচালনা ও লেখাপড়ায় অনেক ক্ষতি হচ্ছে।