সাইফুর নিশাদ মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি : আবহমান বাংলার চিরন্তন দৃশ্যের গরু দিয়ে লাঙ্গল জোয়ালে হালচাষ দেখতে পাওয়া যায় এখন নিতান্তই ভাগ্যগুনে ও কালে ভদ্রে। ভোরের নরোম আলোয় অবাধ্য হালের গরুকে বশে আনতে কৃষকের ‘হট হট হেই হেই’ শোনা যায় এখন মাঠে প্রান্তরে কচিৎ কদাচিত। সে জায়গা দখল করেছে এখন যান্ত্রিক পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর।
দশ বিশ ফসলের মাঠ খুঁজেও এখন আর গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরু দিয়ে লাঙ্গল জোয়ালের হালচাষ চোখেই পড়ে না আর। অথচ বছর দশ/পনেরো আগেও হর হামেশাই গরু দিয়ে লাঙ্গল জোয়ালের হালচাষ দেখা যেতো। মনোহরদীসহ নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ,গাজীপুরের সমগ্র অঞ্চলে প্রাচীন ঐতিহ্যের এ হালচাষই ছিলো কৃষি ও কৃষকের প্রধান অনুসঙ্গ। আজ গ্রামের পর গ্রাম,মাঠের পর মাঠ,অঞ্চলের পর অঞ্চল চষে বেড়িয়েও কচিৎ কদাচিত গরু দিয়ে লাঙ্গল জোয়ালে হালচাষের দৃশ্য চোখে পড়ে না। গ্রামাঞ্চলের একেবারে মামুলী একটি বিষয়ও এখন একটি দুর্লভ চিত্রে পরিনত হয়েছে। এ হেন পরিস্থতিতে ‘বাড়ীর পাশে আড়শী নগরে’র মতোই মিলে গেলো গরু আর লাঙ্গল জোয়ালে হালচাষ।
মনোহরদী-কাপাসিয়ার সীমানা ঘেষে বহমান পুরাতন ব্রম্মপুত্র নদ।সে নদ পেরিয়ে খিরাটির চর। সেখানে গরু দিয়ে হালচাষের একটি ব্যতিক্রমী দৃশ্যের দেখা মিলে গেলো। বুধবার সকালে বৃষ্টি শেষের এক মিষ্টি নরোম রোদে খিরাটি গ্রামের ফয়সাল আকন্দ (৩৫) নেমে পড়েছিলেন কাদা জমিতে। গরু খেদিয়ে জমি চষতে চষতেই কথা বলছিলেন ফয়সাল। নিজের হাল নেই তার। প্রতিবেশী ছাত্তারের হাল গরু ধার নিয়ে বোরো ফসলের বীজতলার জমি তৈরি করা তার। কাদা মাটির এ জমিতে প্রথমে বেশ কবার লাঙ্গল দিয়ে চাষ দিলেন কৃষক ফয়সাল। হট হট হেই হেই করে করে। শেষে গরুতে জোয়াল ঠিক রেখে লাঙ্গল বদলে সেখানে জুড়ে নিলেন মই। এ ভাবে মই দেয়া চলতে থাকলো তার। বহুদিন পরে নয়ন জুড়ানো একটি গ্রামীন ঐতিহ্যের দৃশ্যপট উপভোগ করা গেলো বুধবার সকালে খিরাটির চরে।