বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ অবশেষে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রেলে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। যা এখন আর স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান। এতে মহাখুশি কক্সবাজারের সর্বস্তরের লোকজন।
স্থানীয়রা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ স্থাপন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সড়কটি উদ্বোধন করেই ফেলে রেখেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাস্তবায়ন করেছে সীমান্তের অধিবাসী এবং ব্যবসায়ীদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সংযোগ স্থাপনের এই মৈত্রী সড়ক। ঠিক তদ্রƒপ জেলাবাসীর স্বপ্ন কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনও বাস্তবায়ন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতায় থেকেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে পারেনি। যা শেখ হাসিনার সরকার দ্রুত গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে নতুন যুগের সূচনা হবে রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থায়। পদ্মা সেতুর মতো ক্ষমতাসীন সরকারের উন্নয়নের সাফল্যের তালিকায় কক্সবাজারে রেললাইন একটি বৈপ্লবিক সংযোজন।
অভিজ্ঞ মহল জানান, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ট্রেন যেতে পারে, এ বিষয়ে উন্নয়নের জন্য কোন ধরনের সিদ্ধান্তই ছিল না জোট সরকারের। সারাদেশ থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন যাবে বিষয়টি স্বপ্নের মতো ছিল অনেকের কাছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসার পর এই রেললাইনের স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা পর্যটনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে কক্সবাজারকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রেল পথের কোন উন্নয়ন করেনি। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের কাজসহ কক্সবাজারে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর উন্নয়নের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখেন বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে বিশ্বের কাছে আরও বেশি পরিচিতি করতে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রয়াস। কারণ উন্নত রাষ্ট্রে পর্যটন বিকাশে রেল পথে যোগাযোগ ব্যবস্থাটা হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। আগামী ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমী মানুষ ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যেতে পারবেন তা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের কর্মকর্তারা।
প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের কাজ আপাতত দুভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ কাজ, যার অগ্রগতি এখন দৃশ্যমান। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত। এটির ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত আসেনি। রেলমন্ত্রী পরিদর্শনে এসে কয়েক মাস আগে জানিয়েছিলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে পর্যটন শহর কক্সবাজার পর্যন্ত কাজ শেষ করা হবে। তাই দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ অব্যাহত আছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এখন চলছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের অবকাঠামোগত সংশ্লিষ্ট কাজ। দ্বিতীয় পর্যায়ে কাজ করা হবে কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন প্রতিষ্ঠার।
প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয়ে এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে কক্সবাজারের সঙ্গে রেল পথে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক জানান, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সময় নিয়েছি। সম্প্রতি কক্সবাজারে সফরে এসে রেলপথ মন্ত্রী মোঃ নুরুল ইসলাম সুজন এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়ায় বিশ্বে বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। মন্ত্রী দোহাজারী-কক্সবাজার হয়ে রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য কক্সবাজারে আইকনিক রেলস্টেশন ভবনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন। মন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা-কক্সবাজার রেল যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে এক বছর পিছিয়ে ২০২৩ সালের জুনের আগে কাজ শেষ করা হবে। ওই বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা যায়।
এদিকে কক্সবাজারবাসীর স্বপ্ন ছিল রেললাইন নির্মাণ। এতে বিভিন্ন ব্যবসা বাড়বে পর্যটন খাতে। চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভায়া ঘুমধুম পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২৮ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার মাক্স গ্রুপকে দায়িত্ব অর্পণ করে। দীর্ঘদিন থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার অর্ধকোটি মানুষ স্বপ্ন দেখছিল এ রেললাইন নির্মাণের। সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করছেন স্থানীয়রা। তবে কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা এবং নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে যথাসময়ে রেললাইন নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।