ম.ম.রবি ডাকুয়া : প্লাস্টিকের ব্যবহারের ক্ষতি চরমে পৌছে দিচ্ছে প্রযন্ম থেকে প্রযন্মকে।দেশের সমস্থ শহরকে করে দিচ্ছে জলাবদ্ধ আর কৃষি জমিকে বন্ধ্যা। যা চলবে শতাব্দী থেকে শতাব্দী কাল অবধি।প্রধানত চারটি উপায়ে এর প্রধান ও বেশী ব্যবহার হচ্ছে এখনকার চলমান সময়ে, বাজারে পন্য ক্রয়-বিক্রয়ে, বিভিন্ন প্যানা ও বিলবোর্ডে আশংকা জনক হারে ব্যবহার, পানিয় বোতল জাত করার মাধ্যমে এবং আসবাবপত্র ও বিভিন্ন নিত্য পন্য সামগ্রী হিসেবে।
তা ছাড়াও বর্তমানে আর একটা ক্ষতিকর দিক হচ্ছে মাঠে ময়দানে যেখানে সেখানে প্লাস্টিকের বিভিন্ন খাবারের প্যকেট সহ চিপসের প্যকেট যত্র তত্র ফেলে রাখায় তা গরু-ছাগল সহ বিভিন্ন গবাদি পশু সুস্বাদু ঘ্রান পেয়ে খেয়ে ফেলছে যা বেশ কিছু ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারন হচ্ছে। এটি তাই পশু পালনেও হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
তার মধ্যে খাবার পানির বোতল সবচেয়ে মারাত্বক ক্ষতির কারন হচ্ছে প্লাস্টিকের সংস্পর্শে পানি দূষিত সহ এতে খাবারের সাথে প্লাস্টিকের কনা শরীরে প্রবেশ করার মধ্যমে ক্যনসার সহ নানা সমস্যা হচ্ছে। আর অন্যটি হচ্ছে এখন প্রচারের জন্য ছেলে বুড়ো থেকে শুরু করে সর্বস্তরের প্রচারের জন্য প্যনা ও বিলবোড তৈরীতে প্লাস্টিকের মারাত্বক ব্যবহার।এর ফলে মাঠ-ঘাট চাষের জমি জলাশয়ে সব জায়গায় পৌছে যাচ্ছে প্লাস্টিক যা হাজার বছরের জন্য পরিবেশের হুমকি স্বরুপ।
জীবন যাপনকে সহজ করতে আমরা প্রতিদিন আমাদের প্রয়োজনে অজ্ঞতার সববর্তী হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করি পরবর্তী প্রজন্মকে হাজার বছরের মুর্খতা উপহার দিয়ে যাচ্ছি।যেমন আমরা বাজার করতে আগে সঙ্গে একটি চটের ব্যগ নিয়ে আসতাম এখন খুব সহজেই দোকানি একটা পলিথিন ধরিয়ে দিচ্ছে। চলতি পথে পান করার জন্য পানির বোতল, ফার্ণিচার, সবই এখন প্লাস্টিকের।এবং এটা অন টাইম হিসেবে খুব গর্বের সাথে ব্যবহার করলেও পরবর্তী প্রযন্মের জন্যে কয়েক শত বছর ধরে এটি অভিশাপ হয়ে যাচ্ছে যা মোটেই গর্বের নয়।
আসুন জেনে নেয়া যাক সাধারন ব্যবহার কারা বস্তু কতদিনে পচে আর প্লাস্টিক কতদিন সময় নেয়।আপনার খাবার পর কলার খোসা পচতে সময় লাগে ৩/৪ সপ্তাহ। স্যনিটারি ন্যপকিন পচতে সময় নেয় ২থেকে ৪ সপ্তাহ।কাগজ পচতে সময় নেয় এক মাস।তুলার গ্লোভস আমরা অনেকে হাতে কাজ করার সময় ব্যবহার করি এটি পচতে সময় নেয় ৩ মাস।খাবার অন্যতম ফল কমলা এটি পচতে সময় নেয় ৬ মাস।ফার্ণিচারের প্লাইউড পচতে সময় নেয় ১ থেকে ৩বছর।একটি উলের মোজা ১ থেকে ৫ বছর সময় নেয় পচতে।সিগারেটের বাট বা তুলার অংশ পচতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ বছর।চামডার জুতার চামড়া পচতে সময় নেয় ২৫ থেকে ৪০ বছর। লোহা বা ষ্টিল সম্রিদ্ধ ক্যান পচতে সময় নেয় দশ থেকে সর্বচ্চ ১০ থেকে ৫০ বছর। আর প্লাস্টিকের কর্টেইনার বোতল বা বিভিন্ন দ্রব্য পচতে সময় নেয় ২০০ থেকে ১০০০ বছর। অর্থাৎ আজ আমরা প্রতিদিন একটা প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করাছি তো আগামী প্রযন্মের জন্যে হাজার বছরের অভিশাপ রেখে যাচ্ছি।
প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজান পণ্য যেমন জুতা, স্যান্ডেল, চশমা, চিরুনি, টুথব্রাশ, মোবাইল সেট, কলম,পানির বোতল, মাস্ক সহ নানা পণ্যে আষ্টে পিষ্টে বেঁধে রেখেছে বর্তমান প্রযন্মকে।
পাতলা প্লাস্টিকের গ্লাসে এখন পানির পাশাপাশি গরম চা ও কফি পরিবেশন করা হচ্ছে যা খাওয়া থেকে শুরু করে ফেলে দেয়া অবধী ক্ষতি হয়ে দাড়াচ্ছে সবারি অজান্তে।
এক গবেষনায় প্লাস্টিকের ব্যবহারের ভয়াবহতা বেরিয়ে এসেছে প্রতিবছর মাথাপিছু ৫ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হচ্ছে। এবং বাংলাদেশের প্লাস্টিক দ্রব্যাদির বাজার প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের। আর এর উৎপাদনের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। এবং ২০ লাখের বেশী এর সাথে জড়িত। শুধু মাত্র ঢাকা শহরে প্রতিদিন ১কোটি ২০ লাখ পলিব্যগ পরিত্যক্ত হয়ে তা পুকুর ডোবা, নদী-নালা ও সাগরে গিয়ে জমা হচ্ছে। এর সাথে এখন বাড়তি যোগ হয়েছে প্লাস্টিকের প্যানা ও বিলবোর্ড।বর্তমানে যে হারে চাষের জমি সহ পুকুর, রাস্তা ঘাট, ভরে আছে প্লাস্টিকের বর্জ্যে তাতে সকল শহর বর্ষা মৌসুমে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সহ সম্পূর্ণ উর্বরতা হারাবে চাষের জমি।
বিবিসির এক পরিসংখ্যানে জানাগেছে, বিশ্ব জুড়ে ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সাগরে গিয়ে পড়ছে।এবং ২০৫০ সাল নাগাদ এটি দাঁড়াবে ১ লাখ ৩০ হাজার টনে।
ব্যক্তি, পরিবারিক পর্যায়ে ব্যবহৃত প্লাস্টিকজাত পণ্যের বিকল্প সামগ্রীর মূল্য কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে মানুষ বিকল্প পণ্যগুলো ব্যবহারে আগ্রহী হবে। স্কুলের পাঠ্যসূচিতে প্লাস্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে রচনা-প্রবন্ধ-নিবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করে প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, রাষ্ট্র নানা কার্যক্রম গ্রহণ করছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে আমাদের সরকার ২০১০ সালে জুট প্যাকেজিং আইন পাস করেছে। ইতোমধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্যরে ট্রান্স বাউন্ডারি মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণে একটি আইনি কাঠামো তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে ‘সিঙ্গেল ইউজ’ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা, আইন মান্যতার তাগিদ সৃষ্টি না হলে রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কোনো কার্যক্রমই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। সরকারের এ শুভ উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়নে সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।