পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার চাটমোহরে বিভিন্ন বিলে, ফসলি জমিতে অবাধে পুকুর খননের অভিযোগ উঠেছে। খনন করা পুকুরের মাটি ট্রাক ও ট্রলিযোগে বিক্রি হচ্ছে অনুমোদনহীন ইটভাটায়। পুকুর খননের জন্য সরকারি অনুমোদন নেই। দিনে এবং রাতে এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করা হলেও এ বিষয়ে কারো কোন মাথাব্যাথা নেই।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের বিন্যাবাড়ি গৌরনগর ছয়আনী বিলে গিয়ে দেখা যায়, এস্কেভেটর দিয়ে বিলের ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করা হচ্ছে। যাদের কোন অনুমোদন নেই। ৫টি মিনি ট্রাক ও কুত্তাগাড়ি (শ্যালো ইঞ্জিন দ্বারা তৈরি ট্রলি) দিয়ে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। বিলের মাঝখানে নিচু জমি হওয়ায় দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, লিটন, বাবু, সাইফুল সহ কয়েকজন এই মাটি কাটা ও বিক্রির সাথে জড়িত। মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে আশপাশের ফসলি জমি ও চলাচলের সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। রাতেও চলে মাটি কাটা। রাতে থাকার জন্য পাশেই খড় দিয়ে একটি টঙ ঘর বানিয়ে নেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত লিটন বলেন, আমাদের অনুমোদন আছে। কোনো সমস্যা নাই। অনুমোদনের কাগজ দেখতে চাইলে ২০২০ সালের একটি ডিসিআরের কাগজ দেখান। অর্থাৎ ২০২০ সালের অনুমোদনের কাগজ দেখিয়ে ২০২২ সালে এসেও তারা পুকুর খনন করছেন। মাটি বিক্রি করতে পারেন কি না জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
তথ্য মতে, গত কয়েকদিনে উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের লাঙ্গলমোরা বিলে, মথুরাপুর ইউনিয়নের চিরইল বিলে, ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের খৈরাশ ও কাটাখালী, হরিপুর, নিমাইচড়া ও হান্ডিয়াল ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে পুকুর খনন করা হয়েছে। যার কোন প্রকার অনুমোদন ছিল না।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা জানান, ফসলি জমির মালিক মাটি কাটার জন্য স্থানীয় মাটি ব্যবসায়ীর সাথে চুক্তি করে এই কাজ করছে। মাটি বহনকারী কুত্তা গাড়ির দাপটে প্রধান রাস্তাসহ জনচলাচলের অন্যান্য সড়কগুলির চরম ক্ষতি হচ্ছে। পাশিপাশি মাটি বহনকারী এসব কুত্তা গাড়ির মাটি বহন করার সময় ধুলাবালিতে পথ চলাচলকারী শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা হচ্ছে।
একাধিক সূত্র জানায়, ফসলি জমির সেই মাটি বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কুত্তাগাড়ি ৫শ’ থেকে ৬শ’ টাকায়। কুত্তা গাড়িযোগে বিক্রিত মাটি চলে যাচ্ছে ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে। এই সকল গাড়ির কারণে সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। আশপাশের জমিও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা পুকুর খনন বন্ধ করে দেন। কিছুদিন বাদে আবার শুরু হয়। এভাবেই চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রির উৎসব।
চাটমোহর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) তানজিনা খাতুন বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে এখনই লোক পাঠাচ্ছি। আমরা যখনই খবর পাচ্ছি, সাথে সাথে বন্ধ করে দিচ্ছি। এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে মূলগ্রাম ও ডিবিগ্রাম ইউনিয়নে দু’টি স্থানে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মানুষ সচেতন না হলে প্রতিরোধ করা কঠিন বলেও মনে করেন তিনি।