রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি : সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পের আওতায় রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের লেক্ষুংছড়া হতে বোয়ালছড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ করে দিয়েছে সদর উপজেলা পরিষদ। রাস্তাটি নির্মাণের ফলে বদলেছে ৬ শতাধিক মানুষের জনজীবন। প্রতিদিন চলাচল করতে পারছে শত শত লোকজন। এর আগে সংস্কারের অভাবে বর্ষা মৌসুম এলে গ্রামের মানুষের চলাচলে কষ্ট হতো।
জানা যায়, অনেকবছর ধরে পাহাড়ের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাতায়ত করত ৬ গ্রামের ৬ শতাধিক লোকজন। গ্রামবাসীরা তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে উপজেলা পরিষদ বরাবর লিখিত আবেদন জানালে বিষয়টি মিটিং এ প্রস্তাব করা হয়। আবেদনটি অনুমোদন হওয়ায় ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করে রাস্তা তৈরির কাজটি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সভাপতি দায়িত্ব দিয়ে তার মাধ্যমে করা হয়। রাস্তাটি পেয়ে খুশি স্থানীয়রা।
লেক্ষুংছড়া গ্রামের বাসিন্দা হরি কুমার চাকমা বলেন, বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নে অনেকজন চেয়ারম্যান মেম্বার হয়েছেন তাদেরকে রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে অনেকবার বলেছি কিন্তু তারা কেউ আমলে নেয়নি। বর্ষাকাল আসলে পাহাড়ের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যখন হাঁটাচলা করি তখন সাপ অথবা পোকামাকড় কখন কামড় দেয় ভয় লাগত। এখন রাস্তাটি পেয়ে অনেক সুযোগ সুবিধা হয়েছে এজন্য আমরা অত্যন্ত খুশি।
একই গ্রামের উৎপল চাকমা বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার একমাত্র পথ ছিল লেক্ষুংছড়া রাস্তাটি। বর্ষাকালে তারা যখন স্কুলে যেত প্যান্ট শার্ট ভিজা অবস্থায় ক্লাস করতে হতো। তাছাড়া কলা, হলুদ, ধান অনেককিছু বহন করতে আমাদেরও কষ্ট হতো। ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ যেকোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে যেতে হলে এই রাস্তা ছাড়া আর কোন বিকল্প পথ নেই। রাস্তা সংস্কারের আগেই কষ্ট হলেও কি করতাম বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হয়। রাস্তাটি যখন অনুমোদন হয়েছে শুনেছি আমরা খুশি হয়েছি। আর এখন যাতায়তের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হবে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চংড়াছড়ি, উলুছড়ি, বোয়ালছড়ি, ধুরখেয়ে, সাহজবান্ধা করল্লেমুড়ো এই ৬ গ্রামের শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম লেক্ষুংছড়া হতে বোয়ালছড়ি রাস্তাটি। শিক্ষার্থীদের ও সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশার কথা চিন্তা করে অবশেষে প্রকল্প হাতে নিয়ে ২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১২ ফুট চওড়া ২ কিলোমিটার রাস্তা এক মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা হয়। এ গ্রামে রয়েছে বন্দুকভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, ভারবোয়াচাপ বন বিহার, লেক্ষুংছড়া ধর্মোদয় বৌদ্ধ বিহার, বন্দুকভাঙ্গা ইউপি কার্যালয়, বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রাস্তাটি তৈরি করায় গ্রামীণ শিক্ষা, যোগাযোগ ও কৃষির ক্ষেত্রে যাতায়তে অনেকটা সহজ ও কষ্ট লাঘব হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্যানেল চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন ইসলাম বলেন, রাস্তাটি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে চেষ্টা করে আসছি। আবেদনটি আমলে নিয়ে মিটিং এ উপস্থাপন করি এতে আমার উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কার করে দিই। কাজ শুরুর আগে নিজে গিয়ে পরিদর্শন করে কাজের উদ্বোধন করি। গ্রামবাসীর প্রতি আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ ও ধন্যবাদ জানাই তাদের সহযোগিতা পেয়েছি, সুন্দর একটি রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন। আমি সেই রাস্তায় চলাচল করি বা না করি সেটা বড় বিষয় নয় এলাকাবাসী সুবিধা সুবিধা পেলেই হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার ছিল তৃণমূল পর্যায়ে জনগণকে স্বাবলম্বী করে গ্রামকে শহর করে তুলে দৃঢ় প্রত্যয়ে আধুনিক পর্যায়ে রুপ দেবে। প্রতিটি উপজেলাকে সক্ষমতার আওতায় এনে ভীত মজবুতায়ন করবেন। এর উন্নয়নের কাজ ধারাবাহিক ভাবে অব্যাহত রয়েছে। এভাবে প্রতিটা গ্রামের উন্নয়ন সাধিত হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত “প্রতিটি গ্রাম হবে শহর” অতি অল্প সময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।