রিমন পালিত :বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানে পেঁপে চাষে আগ্রহী হচ্ছেন দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকরা । বিষাক্ত তামাকের বদলে পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার অনেক কৃষক। পাহাড়ে উৎপাদিত পেঁপের গুণাগুণ ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায় এর চাহিদা বেশি। স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও বাঙালিরা উপজেলার বিভিন্ন পাহাড় ও সমতল জমিতে পেঁপের আবাদ করেছেন। বর্তমানে রোয়াংছড়ি উপজেলার বিভিন্ন জায়গাতে বাণিজ্যিকভাবেও এটির ব্যাপক চাষ হচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে কৃষকরা তামাক চাষ বাদ দিয়ে এ চাষে আরো বেশি ঝুঁকবেন।
পার্বত্য এলাকার পাহাড়ে কিংবা সমতলে সারা বছরই পেঁপের চাষ করা যায়। ফলে বারো মাসই এ সবজি বা ফল হিসেবে পাওয়া যায় এখানকার হাট-বাজারে। পেঁপে চাষ করে চাষিরা নিজের পরিবারে পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করছেন। দেশের বেশিরভাগ মানুষ পুষ্টির অভাব পূরণে শাকসবজি ও ফলমূলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এখন পাহাড়ে সারা বছরই পেঁপের চাষ করা হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকার আবহাওয়া ও মাটি পেঁপে চাষের উপযোগী। পেঁপে শুধুমাত্র ফল হিসেবে নয়, সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এতে আছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। পাহাড়ি পাথুরে-বেলে মাটিতে পেঁপের চাষ ভালো হয়। সে হিসেবে ৪০ শতক জমিতে বছরে প্রায় ৫ হাজার থেকে দশ হাজারটি পেঁপে উৎপাদন হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড় ও সমতলের প্রায় ১০ একর জমিতে পেঁপের চাষ হয়েছে।
অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ. আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, ডিপথেরিয়া, আন্ত্রিক ও পাকস্থলির ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন অতি উপকারী। এছাড়া পেঁপের আঁঠা/ক্ষির ও বীজ ক্রিমিনাশক ও প্লীহা যকৃতকে সতেজ রাখে। রোয়াংছড়ি উপজেলার কৃষক লাথোই মারমা জানান, প্রতি একর পেঁপে চাষে ২৫ হাজার টাকা মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যাংক, এনজিও বা নিকটাত্মীয়দের থেকে সুদের উপর ঋণের টাকা নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা পেঁপে চাষ করছেন । তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহজশর্তে ঋণ সহযোগিতা পেলে কৃষকরা পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিবেশ ও কৃষি শিল্পবান্ধব কৃষকদের এ দাবি পূরণে সরকার বা কোনো বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।
রোয়াংছড়ি উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুর্সিং মারমা জানান, পেঁপের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে এই এলাকায় স্থানীয় পেঁপে বেশি চাষ হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্চ ফলনশীল শাহী, থাইল্যান্ডীসহ আরো কয়েক প্রজাতির পেঁপে চাষ করছেন অনেকে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর দো-আশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পরিচর্যা করলে সব ধরনের মাটিতেই চাষ সম্ভব। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামাঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। এছাড়া শাহী পেঁপে সারা বছরই চাষ করা যায়। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিনে চারা তৈরি করলে, দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়।