রিয়াজ হোসেন (লিটু), নাটোর: আগামীকাল রবিবার ২০ ফেব্রুয়ারি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দীর্ঘ ৭ বছর পর এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতা কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসাহ উদ্দিপনা। এরইমধ্যে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে নাটোর শহরের বাবু শংকর গোবিন্দ চৌধুরী স্টেডিয়ামের সামনের অংশ। স্টেডিয়ামের ভেতরে চলছে মঞ্চ তৈরি ও সাজ-সজ্জার কাজ। এই সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দুটি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন সিনিয়র ও জুনিয়র মিলিয়ে প্রায় এক ডজন প্রার্থী।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস এমপি সভাপতি ও শফিকুল ইসলাম শিমুল সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এবার কে হচ্ছেন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে চলছে জল্পনা ও কল্পনা।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আব্দুল কুদ্দুসের পাশাপাশি সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর সদর উজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ আলী শেখের ছোটভাই অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক শেখ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজল রায়, রতন কুমার সাহার নাম শোনা যাচ্ছে।
কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে না কেন্দ্র নির্ধারণ করবে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। তবে দলের নেতাকর্মীরা বলছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ বিষয়ে দলের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, অতীত থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোনো রকম ভোটাভোটি ছাড়াই নেতা নির্বাচিত হয়ে আসছেন। তবে ২০১৪ সালে সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করা হয়। এবার যদি কাউন্সিল হয় সেটাও ভালো না হলে কেন্দ্র যেটা ভালো মনে করবে সেই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেবো।
সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের এই সম্মেলনকে ঘিরে জেলার ২০ লাখ মানুষ উৎসুক হয়ে রয়েছে, কে নেতা হচ্ছেন এই সম্মেলনে। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা বা কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত দেন তা সবাই মেনে নেবে। জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আজম স্বপন বলেন, আমরা দুর্নীতি, চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে নিজ দলকে জিম্মি করে এমন নেতৃত্বকে দেখতে চাই না।
নাটোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, একজন রাজনৈতিক কর্মীকে আন্দোলন, নির্বাচন ও সম্মেলন এই তিনটি পরীক্ষা দিতে হয়। নাটোর জেলার মানুষ তাকিয়ে আছে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির সম্মেলনের দিকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমন সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই দেবেন যাতে করে আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করাসহ দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় আওয়ামী লীগ।
সংসদ সদস্য মহিদুল ইসলাম বকুল ও রত্না আহমেদ বলেন, আমাদের আস্থা রয়েছে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি। তিনি নিশ্চয়ই সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব আমাদের উপহার দেবেন, যাতে করে দল আগামীতে আরো শক্তিশালী হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, সম্মেলনকে ঘিরে নাটোর জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসব আমেজ চলছে। গোটা শহর পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে। শুভ কামনার পোস্টারে শহরের ভবনগুলোর দেয়াল ফাঁকা নেই। নির্মাণ করা হচ্ছে অনেক তোরণ। রাতে অনেক ভবনে আলোকসজ্জাও করা হচ্ছে।
তবে সম্মেলনকে ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিজ নিজ সমর্থকদের সঙ্গে মিছিল ও শোভাযাত্রা করতে দেখা যাচ্ছে। তবে ছোট খাট দু’একটি ঘটনা ছাড়া সবাই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ নেতা কর্মীদের নিয়ে সহাবস্থানের মধ্যেই শোভাযাত্রা ও মিছিল করছেন বলে জানা গেছে।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ , রাজশাহী বিভাগীয় সাংগাঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।