রিয়াজ হোসেন (লিটু), নাটোর : নাটোরের লালপুরে আখের অভাবে নর্থ বেঙ্গল চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করার ২২ দিন পরেও পাওয়ার ক্রাশারে আখমাড়াই এখনো চলছে। কৃষকেরা চিনিকলে আখ সরবরাহ না করায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক চিনি উৎপাদন করতে না পারলেও ১ ফেব্রুয়ারি আখমাড়াই বন্ধ করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। অথচ চিনিকল এলাকার মাঠে কৃষকের প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন আখ জমিতে রয়েছে। এসব রেখে আখের অভাবে এই মাড়াই মৌসুম শেষ করা হয়।
চিনিকল সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১-২২ মৌসুমে ১ লাখ ৯৪ হাজার ২৮৬ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৭০ কর্মদিবসে ১২ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। চিনি আহরণের হার ধরা হয় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। মিল এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ চাষ করেন প্রায় ১৭ হাজার কৃষক। মিলের পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ ৭৬৬ কোটি টাকা। লোকসানের বোঝা নিয়ে গত ২৬ নভেম্বর ২০২১ মিলের ৮৯তম মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন করেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল।
কৃষকেরা চিনিকলে আখ সরবরাহ না করায় মাত্র ১ লাখ ২ হাজার ২২২ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ হারে ৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করে ১ ফেব্রুয়ারি মাড়াই মৌসুম শেষ করে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাওয়ার ক্রাশারে আখ মাড়াই করে গুড় তৈরির জন্য মাঠে কৃষকেরা আখ কাটছেন। সেই আখ গরু-মহিষের গাড়ি, ভ্যান, ট্রলিতে করে পরিবহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
আখচাষি মসলেম উদ্দিন বলেন, চিনিকলে আখ সরবরাহে কৃষকদের আগ্রহ নেই। চিনিকলে আখ বিক্রি করলে চাষিদের লোকসান হয়। মাড়াইকলে আখ বিক্রি করলে প্রতি মণে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি পান তাঁরা। আখের মূল্য কম দেওয়ায় চিনিকলে কৃষকেরা আখ সরবরাহ করেন না। কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, চিনিকল প্রতি মণ আখ ১৪০ টাকায় কেনে। সেখানে পাওয়ার ক্রাশার মালিকেরা প্রতি মণ আখের দাম দেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা।
চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মুনজুরুল ইসলাম বলেন, মাঠে দ-ায়মান আখ থাকলেও চিনিকলে এর মূল্য কম থাকায় অনেক চাষি পাওয়ার ক্রাশার মালিকদের কাছে আখ সরবরাহ করছেন না। ফলে আখসংকটে এই মাড়াই মৌসুম শেষ করতে হয়েছে। উত্তরবঙ্গ চিনিকল আখচাষি সমিতির সভাপতি আনছার আলী দুলাল বলেন, চিনিকলের আখ সরবরাহ করে আখের উৎপাদন খরচও পান না চাষিরা। তাই তাঁরা চিনিকলে আখ সরবরাহে আগ্রহ হারাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ূন কবির বলেন, মিল এলাকায় সারা বছর প্রায় ৩০০টি কলে আখমাড়াইয়ের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেক হয়েছে। মাঠে দ-ায়মান আখ পেলে আরও ১৫ দিন মাড়াই করা যেত। চিনিকলে আখ সরবরাহ না করায় কাঁচামালের অভাবে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সারা বছর উৎপাদন কার্যক্রম চালু থাকবে। এতে মিলের লোকসান থাকবে না। আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে।