পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার সুজানগর পৌরসভার টিকাদানকারী আল আমিন হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রতিবাদে ও পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে মিথ্যাচার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাবনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে শুক্রবার বেলা ১১ টায় সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেছেন, পৌর কর্মচারী আল আমিন হত্যা মামলার আসামীরা একাধিক মামলার আসামী রয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল ওহাব ও তার প্রভাবশালী অনুসারীরা হত্যাকান্ড ও মামলাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, শুধু আল আমিন হত্যাকান্ডই নয়, এ অঞ্চলের আলোচিত চারটি হত্যা মামলার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত রয়েছে আব্দুল ওহাব। নিহত আল আমিনকে পৌর মেয়র থাকাবস্থায় বরখাস্ত করেছিলেন আব্দুল ওহাব। আবার সে হত্যার শিকার হওয়ার পর তার পরিবারের পাশে না দাঁড়িয়ে হত্যাকারীদের রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, একাধিক হত্যা, খুন, চাঁদাবাজি, ধর্ষন, অস্ত্র, মাদক, পুলিশের উপর হামলাসহ নানা ফৌজদারী মামলার আসামীদের নিয়ে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত করছেন। তিনি দাবী করেন, এই হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে নিতে এবং আমাকেসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবিরকে জড়িয়ে নানা মিথ্যা ও মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সুনাম ক্ষুন্ন করছেন। আমরা এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে সুজানগর পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম রেজা, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম, সহসভাপতি হাবিবুর রহমান বাদশা, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রাজু আহমেদসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল ওহাব বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন সংবাদ সম্মেলনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, জবরদখল, বালুদস্যুতাসহ ভূমিদস্যুদের সাথে সখ্যতা গড়েছেন। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে জনসভায় পুলিশ ধরলেও মামলা হয়নি, ইউপি নির্বাচন কেন্দ্রিক প্রকাশ্য কলেজ ছাত্রকে গুলি করে হত্যার ঘটনার মামলা হয়নি। তিনি ও তার অনুসারীরা অজ্ঞাত কারণে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আব্দুল ওহাব বলেন, নিহত আল আমিনকে আমি চাকুরি দিয়েছিলাম। কমিশনার হেলালকে মারপিটের কারণে তাকে বরখাস্ত করেছিলাম। পারিবারিক জমিজমা নিয়ে বিরোধে খুনের শিকার হয়েছেন আল আমিন। অথচ ঘটনাটি রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক শাহীন ও তার অনুসারীরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা মামলা সাজিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলের বিদ্রোহী ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচন করেছিলেন। উপজেলায় ৮ টি প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়ে নির্বাচনে জয়ী করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পাগলের মতো আচরণ করছেন উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন। তিনি শাহীনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও সন্ত্রাসীর কর্মকান্ডের তদন্ত দাবী করে সাংগঠনিক ভাবে তার শাস্তির দাবী জানান।
উল্লেখ্য, গত ১৪ মার্চ দুপুরে পাবনা আদালত থেকে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছিল আল আমিন। পথিমধ্যে আতাইকুলা থানার সাদুল্লাহপুর নামক স্থানে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাথারী ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহত আল আমিন উপজেলার রাধানগর মহল্লার মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে।