স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে অনভিজ্ঞ, মেলা করার যোগ্যতা-বৈধতা নেই এবং বাংলাদেশ ট্রেড ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্ভূক্ত নয় এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পাবনা পুলিশ লাইনস মাঠে ‘পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি’ (পুনাক) মেলা আয়োজক হিসেবে অনুমোদন দেয়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন বাণিজ্য মেলা করবে এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় সুধিজনেরা।
সুধিজনেরা বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাজ শিক্ষাদান করা। তারা কেন মেলা করবে-এমন প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে মেলা করার মত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টও নেই বিতর্কিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
অভিযোগ উঠেছে, ২০১৯-২০২০-এ পুনাকের মেলা আয়োজক ছিল এসআরটিসিএল নামক একটি প্রতিষ্ঠান। মহামারী করোনাকালীন সময়ে আয়োজিত মেলাতে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখে পড়ে। তাদের ক্ষতি পুশিয়ে দিতে তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) পরবর্তী মেলার অনুমতি তাদেরকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে সময়ে প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে এবং পুলিশ সুপারের কথানুযায়ী আয়োজক প্রতিষ্ঠান এসআরটিসিএল কর্তৃপক্ষ পুনাক ফান্ড এবং পুলিশ লাইনস মসজিদ উন্নয়ন ফান্ডে ৫০ হাজার করে ১ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করে।
এসআরটিসিএল কর্তৃপক্ষ দাবী করছে, পুনাকের আসন্ন মেলা আয়োজন নিয়ে বর্তমান পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানও আলোপ আলোচনার এক পর্যায়ে তাদেরকে মেলার অনুমতি দেওয়ার প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি দেন। আকস্মিক ভাবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলামোশন ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি নামক একটি পলিটেকনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে।
এসআরটিসিএল নামক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ রহমান ‘বাংলামোশন ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির এ ধরণের মেলা করার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দাবী করছেন, এসআরটিসিএল প্রতিষ্ঠানটি মেলা আয়োজনের বৈধ একটি প্রতিষ্ঠান। গতবার করোনাকালীন সময়ে পাবনা পুলিশ লাইনস মাঠে মেলার আয়োজন করে যথেষ্ঠ আর্থিক ক্ষতির সন্মুখিন হয়েছি। তাই পুলিশ সুপারের কাছে সহযোগিতা চাওয়ায় তিনি আসন্ন মেলাটিও আমাদের প্রতিষ্ঠানকে দেবেন এমন আশ্বস্ত করেন। মেলার সংক্রান্ত আলোচনা চলমান থাকাবস্থায় অজ্ঞাত কারণে ১৬ ফেব্রুয়ারি মেলা আয়োজনের দায়িত্ব দিয়েছেন ‘বাংলামোশন ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। তিনি বলেন, এতে করে আমাদের মানসিক, আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সম্মানহানিও হয়েছে।
ভূক্তভোগীরা জানান, যে প্রতিষ্ঠানের মেলা করার কোন বৈধতা নেই। বৈধতা কাগজপত্র দাখিল করতে না পারায় তারা ‘বাংলামোশন ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ বাংলাদেশ ট্রেড ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদও পায়নি। জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই বাছাই না করেই রহস্যজনক ভাবে মেলার দায়িত্ব দেয়ায় বির্তকের সৃষ্টি হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে বৈধ ব্যবসায়ীকে।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে বাংলামোশন ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বাংলাদেশ ট্রেড ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নন দাবী করে বলেন, মেধা, দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিত্বে মেলা করার অনুমতি পেয়েছি। পুলিশ লাইন মাঠে প্রশাসনিক কাজের কারণে আমরা কাজ শুরু করতে পারিনি। তিনি দাবী করেন, আমার এই প্রতিষ্ঠানটি পলিটেকনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ধরণের মেলাসহ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের।
পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।