রিমন পালিত:বান্দরবান প্রতিনিধি: বান্দরবানের এনজিও সংস্থা তাজিংডং এর সক্ষমতা প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়েছে।
প্রকৃতি ও মানুষের সৃষ্টি দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য তাজিংডং এনজিও সংস্থা থেকে নেওয়া সক্ষমতা প্রকল্পের বেশ অনিয়ম বর্তমানে চোখে পড়ার মতো।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ মে মঙ্গলবার সকালে সরজমিনে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে পরিদর্শন করলে বান্দরবানের ২ নং কুহালং ইউনিয়নের দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজের বিনিময়ে অর্থ কর্মসূচি ২০২২ এর এই কাজটি চোখে পড়ে। এটি বান্দরবান সদর উপজেলা ০৪ ওয়ার্ডের বালাঘাটা বিক্রি ছড়া পাড়া হতে মৃদুমং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা সংস্কারের কাজ ।
উল্লেখ্য যে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ইউপি সদস্য পাড়াবাসী ও কর্মরত লেবারদের অভিযোগ তাদের এলাকায় উন্নয়নের জন্য যে কাজটি তাজিংডং সক্ষমতা থেকে নেওয়া হয়েছে তা মোটেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যে কাজটা করা হচ্ছে তা শুধু নাম দেখানো কাজ যেখানে কাজের সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
এ বিষয়ে উক্ত এলাকার ইউপি মেম্বার মোঃ কালাম জানান এটি আমার এলাকা আমাদের এলাকায় যে কাজটি এনজিও সংস্থা থেকে করা হচ্ছে সেটি মোটেও ভালো ভাবে করা হচ্ছে না। আমি এলাকা দিয়ে হেটে যাবার সময় প্রতিদিন এলাকার জনসাধারণ আমাকে অভিযোগ করে যেন তাদের কাজটি ভালোভাবে করে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পেয়েছি কাজটি আসলে যেভাবে করার কথা ছিল সেভাবে করছে না বর্তমানে নাকি ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকার মতো কাজ তারা সম্পন্ন করেছে। কিন্তু বাস্তবে সে কাজটিতে ৪০ হাজার টাকার কাজ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। রাস্তায় সামান্য হালকা পরিমাণ মাটি ছিটিয়ে দিয়েছে তা বৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে সব চলে গেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাড়াবাসী। প্রকল্পের মেয়াদ তো কিছুদিন পরে শেষ তারা তাদের দায়িত্ব থেকে তখন দূরে সরে যাবে এভাবে হেলাফেলা করলে এলাকাবাসীর অনেক ক্ষতি হবে । তাজিংডং এনজিও সংস্থার যে সুনাম ছিল বান্দরবানে তারা আস্তে আস্তে মানুষের মন থেকে উঠে যাবে। তাই আমি একজন ইউপি সদস্য হিসেবে চাই এলাকার উন্নয়ন হোক জনগণের কষ্ট দুর্ভোগ লাঘব হোক ।
পাড়াবাসী সাথে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাড়াবাসী জানান ,আমি নিজে প্রতিদিন ৪০০ টাকা পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে এ রাস্তার কাজে সংযুক্ত আছি । আমি একজন শ্রমিক হিসেবে নিজে দেখতে পাচ্ছি কাজটা কোন ভাবে ভাল হচ্ছেনা কোনরকমে করে চলে যাচ্ছে। আমি সাধারণ একজন শ্রমিক হলেও আমি এই পাড়ার একজন বাসিন্দা । কষ্ট শেষে আমাদেরকে ভোগ করতে হবে রাস্তাটির জন্য । তাই আমরা সম্পূর্ণ পাড়াবাসী চাই আমাদের এই রাস্তাটি ভালোভাবে করে দেওয়া হোক। নামের জন্য রাস্তা করে তো লাভ নেই যেটা কয়েকদিন পরে ভেঙে যাবে আমরা এরকম রাস্তা চাইনা আমরা একটি ভাল রাস্তা চাই যাতে আমাদের কষ্ট দূর হয়।
এলাকাবাসী আরো জানান তারা সামান্য বাঁশের বেড়া দিয়ে এটি করে যাচ্ছে যা কিছু দিন পর নষ্ট হয়ে পড়ে যাবে। মানুষের উপকার করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে কিছু ড্রামসিট দিতে পারতো যেটি অন্তত ২ থেকে ৩ বছর টেকসই হবে কিন্তু তারা না তা না করে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে কাজ করছে যা শুধুমাত্র লোক দেখানো কাজ।
এই বিষয়ে তাজিংডং সক্ষমতা প্রকল্পের ইঞ্জিনিয়ার উওম কুমার আসাম এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমি ৬ ইঞ্চি মাটি দিয়ে এটি ভরাট করেছি । মাটি চলে গেছে এটা তো আমার দোষ নয় আমি কি করবো। আমরা ভালভাবে কাজ করছি। ( আসলে তার কথার সাথে কাজের কোন মিল নেই। কারণ এলাকাবাসী কোদাল দিয়ে মাটি তুলে দেখিয়েছে ৬ ইঞ্চি তো দূরের কথা ২ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটি নেই ) ।
এ বিষয়ে সরাসরি তাজিংডং সক্ষমতা প্রকল্পের ম্যানেজার পল রায় এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, আপনাদের অভিযোগটি আমরা বিবেচনা করে দেখব। ২ লক্ষ ৮৮ হাজার টাকার কাজটি ছিল ।বিভিন্ন ফান্ডিং সমস্যা ও বিভিন্ন বন্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের কাজটি ব্যাঘাত ঘটেছে । আরো ১৩ দিন বাকি আছে আমরা বাকি কাজটা ভালো করার চেষ্টা করব। কিন্তু ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার যে ক্ষতি হয়েছে তা কিভাবে এলাকাবাসীকে পুষিয়ে দেবে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান তারা ইচ্ছাকৃতভাবে এইটি করেনি। দরকার হলে ১ লক্ষ ৬০হাজার টাকার পরিবর্তে তারা আরও ৩০ হাজার টাকা অনুদান চাইবে তাদের প্রকল্পের জন্য ২০ শতাংশ হারে । কিন্তু জনগণের প্রশ্ন ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি কিভাবে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে করবে। তাতে তারা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মত কোনো জবাব দিতে পারিনি।
বান্দরবানে সবার কাছে তাজিংডং এনজিও সংস্থার সুনামটি এতদিন যেভাবে ছিল সামান্য কিছু অনিয়ম অবহেলা ও সচেতনতা এবং দুর্নীতির কারণে আজ দুর্ভোগের শিকার বিক্রি ছড়া পাড়াবাসি। তাতে করে সুনাম ও বিশ্বাস হারিয়েছে এনজিও সংস্থা তাজিংডং। সচেতন মহলের দাবি সুষ্ঠু পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি তারা কাজটি করতো তাহলে রাস্তার কাজে এত অনিয়ম অভিযোগ ও দুর্নীতি হতো না । তাই বান্দরবানবাসী সহ সকল সচেতন মহল ও পাড়াবাসীর দাবি এই অনিয়ম বন্ধ করে বাকি কাজটি যাতে সুষ্ঠুভাবে করা হয়।